বরিশালে থানার চেয়ারে বসেই নামাজ আদায় করলেন ওসি

:
: ৪ years ago

জরুরী প্রয়োজনে থানায় যায় মানুষ। আর তার সেবা দেয়াই পুলিশের দায়িত্ব।মানুষের সেবা করাও এবাদত বলে মনে করেন মুসলিমরা। আজ রোববার (৩০ আগস্ট) হঠাৎ বিকেল সাড়ে ৩ টায় কোতয়ালী মডেল থানায় সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়ে দেখা যায় থানার অফিসার ইনচার্জ তার নিজ চেয়ারে বসেই নামাজ আদায় করছে।

 

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বেশ কয়েকটি কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। কাজের ব্যস্ততায় নিজের চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের দৃশ্য দেখে অনেকেই প্রসংশা করেছেন। এই প্রিয় মানুষটি সব সময় নিজের কথা না ভেবে মানুষের কথা ভাবেন। এর আগেও বেশ কয়েকটি কাজ করে তিনি প্রসংশা কুড়িয়েছেন জনগনের কাছ থেকে।

 

 

উল্লেখযোগ্য কাজ গুলো হলোঃ

বিশ্বের উন্নত দেশের জনগণ বিপদে-আপদে পুলিশকে পরম বন্ধু হিসাবে দেখে থাকে। বাংলাদেশের পুলিশও জনগণের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ সেবার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে থাকেন।

 

 

যদিও স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের পুলিশ কতটা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার অপকর্মের কারণে পুলিশের ভাবমুর্তি মাঝে মধ্যে ক্ষুন্নও হয়।

 

 

তবে পুলিশের এমন কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা নিজের সুবিধার কথা চিন্তা না করে অসহায় জনগণের পাশে গিয়ে দাড়ান। দেশ এবং জনগণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।

 

 

জীবনের ঝুকি নিয়ে জনসাধারণের জন্য কাজ করেন। এ ধরণের পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডের কারণে জনগণ পুলিশকে পরমবন্ধু হিসাবে মূল্যায়ন করে থাকে। এমনই একজন পুলিশ কর্মকর্তা ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম।

 

 

বরিশাল লঞ্চঘাটে অসুস্থ্য জনবয় বিবি হাটা চলা করতে পারেন না। বরিশালের সাংবাদিকদের সংগঠন উদ্যোগের মাধ্যমে ৩ বেলা খাবার খেতেন তিনি। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশও হয়।

 

 

এর পরেই সেই জয়নব বিবি নজরে আসে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের। গত ২৫ জুলাই সেই জয়নব বিবির চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহন করেন কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম পিপিএম। মানুষ আর মানবেতার কল্যানে নিজেকে উৎসর্গ করা এই মানুষটির।

 

 

তিনি লঞ্চঘাটের এই নারীকে নিজহাতে করে তুলে পুলিশের গাড়িতে করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং তার সকল চিকিৎসার ব্যয়ভার নিজেই নিবেন বলে জানান।

 

 

উল্লেখ যে, অসুস্থ্য জয়নব বিবি (৮০) পিতাঃ হুজুর আলী গ্রাম চরকুকরি মুকরি এলাকায়। পাকিস্তান আমলেই ভাঙ্গনে ভেঙ্গে যায় বসত ঘরটি।

 

 

তখন এসে নতুন ভাবে বসবাস করেন ভোলার চরফ্যাশনে। গ্রামের নামী পুরোপুরি মনে নেই তার। ৩০ বছর বয়সে বিয়ে হয় জয়নব বিবি’র। জয়নব বিবি’র স্বামীর নাম সাদ্দাদ হোসেন।

 

 

স্বামী একই এলাকায় বেশি একটা মনে নেই তার। যেই খানে বসবাস করেন সেই ঘরটিও ভেঙ্গে যায় নদীর ভয়াল গ্রাসে। সেই সাথে ভেসে যায় জয়নবের মা আখি। মায়ের পুরোনামটি মনে নেই তার।

 

 

বাবার নামটি মনে আছে তার। মা নদীতে ভেসে যাওয়ার সময় স্মৃতি হারিয়ে ফেলে জয়নব। স্বামীর সংসারে একটি ছেলে একটি মেয়ে জম্ম নেয়। মেয়ে বড় আর ছেলেটি ছোট তার নাম আল-আমিন।

 

 

কিন্তু মেয়ের পুরো নামটি মনে নেই তার। তবে শশুরের নাম ওসমান কিন্তু গ্রামের নামটি মনে নেই তার। গত ৩০ বছর পূর্বে অন্তসত্ত্বা অবস্থায়ই পাগল হয়ে বাড়ি ছেড়েছেন জয়নব বিবি।

 

 

এর পরে বিধির বিধান মতে এসেই ঠাই হয় বরিশালের জেলা পরিষদ পুকুর পারে। পরে তার গর্ভে জম্মনেয় আল-আমিন নামের ছেলেটি। ছেলেটিকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন জয়নব।

 

 

একটি হাড়ি পাতিল ক্রয় করে মা/ছেলে রান্না করেই দিন জাপন করতেন জয়নব বিবি। গত ৫/৭ বছর পূর্বে জয়নব বিবির স্থান হয় বরিশালের লঞ্চঘাট এলাকায়। পাটের বস্তা আর কোন মতে পুরাতন কাপড় দিয়েই চলতো মা ছেলের জীবন। গত দেড় বছর পূর্বে ছেলেটি চলে গেছে গ্রামের বাড়িতে।

 

 

মা জয়নব বিবি পরে আছে বরিশাল লঞ্চঘাটে। হঠাৎ অসুস্থ্য হয় পরে জয়নব বিবি। অসুস্থ্য হয়ে হাটা চলা বন্ধ হয়ে যায় তার। ঘুমিয়ে থাকতেন একতলা লঞ্চঘাট এলাকায়। দেশের এই মহামারীর সময় হঠাৎ জয়নব বিবি’র দিকে নজর আসে বরিশালে সাংবাদিকদের সংগঠন উদ্যোগের।

 

 

চলমান লকডাউনের কারনে বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চচলাচল। অসহায় হয়ে পরে বরিশাল লঞ্চঘাটের পথ শিশুরা। তাদের খাবারের উদ্যােগ নেয় সাংবাদিকদের সংগঠন ‍‍”উদ্যোগ”।

 

 

টানা ৭০ দিন খাবার বিতরন করা হয়। এসময় উদ্যােগের সিনিয়র সাংবাদিক শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের দৃষ্টিতে আসে জয়নব বিবি। তিনি তার থাকার জয়গাটিকে ত্রিপল দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন।

 

 

বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এবং ঠান্ডা লাগে জয়নব বিবি’র। এসময় প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং ঔষধ পত্রের ব্যবস্থা করে দেন। লঞ্চচলাচল শুরু হওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য খাবার স্থাগিত করেন সাংবাদিকদের সংগঠন উদ্যােগ।

 

 

কিন্তু তারপরেও জয়নব বিবি’র খাবারের দায়িত্ব নেন সাংবাদিকদের সংগঠন উদ্যােগ। এপর্যন্ত ২ মাস যাবৎ ৩ বেলা খাবার চালিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিকদের সংগঠন উদ্যােগ। খাবার দেয়ার সময় কথা হয় জয়নব বিবির সাথে এসময় তিনি তার জীবনের কিছু কথা তুলে ধরেন।

 

 

এর আগে ওসি নুরুল ইসলাম বেশ কয়েকটি কাজে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।যিনি নিজেকে কখনও ওসি হিসাবে নয়, জনগণের একজন সেবক হিসাবে অতিসাধারণ বেশে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেন।

 

 

তিনি ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অফিসার ইনচার্জ হিসাবে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকেই জনস্বার্থ ও মানবিক সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন যা স্থানীয় জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

 

 

গত ১৮ জুন বৃহস্পতিবার বরিশাল সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় অবসরপ্রাপ্ত হতভাগ্য অসুস্থ এক বাবা তার ছেলেকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকে এসেছিলেন পেনশনের টাকা উত্তলন করতে।

 

 

করোনা উপসর্গ নিয়ে হঠাৎ ব্যাংকে অসুস্থ হিয়ে পড়লে ছেলে তার বাবার কাছথেকে পেনশনের টাকা নিয়ে অসুস্থ বাবাকে ওখানে রেখেই চলে যায় তাঁর সন্তান।

 

 

পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে বের হয়ে মুঠোফোনে সেই ছেলে কোতোয়ালী থানায় ফোন করে বলেন, “আপনারা যা করার করেন “সহ অশ্রবণীয় ভাষায় তথ্যদাতা সহ উদ্ধার তৎপরতায় কর্তব্যরত পুলিশকে এমন বিরক্তি প্রকাশে ফোনেই কেটে পরেন জন্মদাতা অসহায় বাবার আদরের সন্তান।

 

 

এমন খবর পেয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম, হতভাগা সেই পিতাকে এম্বুলেন্স যোগে উদ্ধার করে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রক্রিয়া সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

 

 

ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম বলেন,” করোনা ঝুঁকিতে কেউ এগিয়ে না এলেও মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের আদেশ বাস্তবায়নে অসহায় ভুক্তভোগীদের সাথে এমনকি বেওয়ারিশ করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যাক্তির শেষ কাজ করা সহ এই মহামারির শুরু থেকেই আমরা রয়েছি এবং ইনশাআল্লাহ্‌ থাকবো শেষ পর্যন্ত। ওসি নুরুল ইসলামের ন্যায় দেশের প্রতিটি পুলিশ অফিসার সেবার এমন প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে জনগণের পরমবন্ধু হিসাবে পরিচিতি লাভ করুক এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

 

 

ওসি নুরুল ইসলাম আরো বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম থেকেই বেশ সতর্ক অবস্থানে থেকে তৎপর ছিলো কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ সদস্যরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৯ জন পুলিশ সদস্য ও ৪ জন পুলিশ সদস্য’র পরিবার পর্যায়ক্রমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

 

 

১ মে থেকে ১৮ জুনের মধ্যে নমুনা পরীক্ষায় ওই ১৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের সকলেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা গ্রহন করছেন। এদের মধ্যে ৭ জন পুলিশ সদস্য বরিশাল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে করোনা মুক্ত হয়ে সুস্থ হয়ে পুনরায় মানব সেবায় নিজেকে নিয়জিত করেন।

 

 

সন্তান কর্তৃক ফেলে যাওয়া অসুস্থ বৃদ্ধাকে রাস্তা হইতে তুলে এনে এবার শে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলেন বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নূরুল ইসলাম,পিপিএম।

 

 

আজ বৃহস্পতিবার (১৩আগষ্ট) বিকালে সাড়ে ৩টায় এ ঘটনা ঘটে।

 

 

এদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি এর আগেও বেশ কয়েকজন অসুহায় মানুষের পাশে থেকে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন ওসি নুরুল ইসলাম, পিপিএম।