ছাত্রলীগ নেতার মারধরে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা!

:
: ৬ years ago

অপমান সইতে না পেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চাপুইর গ্রামের স্কুলছাত্রী জান্নাত আক্তার লিমা আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত রোববার সকালে নিজ বাড়িতেই সে আত্মহত্যা করে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে  সোমবার বিকেলে লিমার মরদেহ দাফন করা হয়। প্রথম দিকে বিষয়টি চাপা থাকলেও,  মঙ্গলবার ঘটনাটি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে লিমার পরিবার।

নিহত লিমা চাপুইর আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসি মো. নুরুল হক ভূঁইয়ার মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. উদয় খান ও তার লোকজন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে লিমাকে প্রকাশ্যে মারধর করে। লিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে, এই অভিযোগে ইয়াছিন নামে এক যুবককেও মারধর করা হয়।

লিমার পরিবার জানায়, আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের মো. ইয়াছিন নামে এক যুবক তাদের বাড়িতে বছর দু’য়েক আগে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। রোববার সকালে লিমা ও ইয়াছিনকে চাপুইর গ্রামের পাশ্ববর্তী খেওয়াই গ্রামে মারধর করে উদয় খান ও তার লোকজন। মারধরের পর লিমাকে তার এক আত্মীয় এসে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ইয়াছিনকে চাপুইর আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে আটক করে রাখা হয়। এরই মধ্যে লিমা নিজ বাড়িতে এসে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

নির্যাতিত ইয়াছিন জানান, তিনি বিবাহিত। লিমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। লিমার কাছে থাকা তার একটি সিম নিতে এসেছিলেন তিনি। এছাড়া উদয়ও তাকে আসার জন্য ফোন করে। পরে খেওয়াই এলাকায় সিম দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে উদয়সহ অন্যান্যরা লিমা ও তাকে মারধর করেন।

লিমার বড় ভাই রজব আলী কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, উদয় ও তার লোকজনের প্রকাশ্য মারধর ও অপমানের কারণেই লিমা আত্মহত্যা করেছে। লিমার বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

লিমার ফুফাতো ভাই মো. মনির মিয়া জানান, তিনি অনেক ছেলেদের জটলা দেখে এগিয়ে যান। এ সময় লোকমান নামে এক যুবককে দেখেন লিমাকে মারতে উদ্যত হয়েছেন। এ সময় তিনি লিমা তার মামাতো বোন বলে পরিচয় দেন। তিনিও তখন লোকমানকে মারতে উদ্যত হন। এ অবস্থায় লিমাকে তিনি বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বাড়িতে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই লিমা আত্মহত্যা করে।

এ ব্যাপারে চাপুইর আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  জানান, এক সহকারী শিক্ষকের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি এসে দেখেনে ইয়াছিন নামে এক যুবককে আটকে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে লিমা নামে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলার পর্যায়ে খবর আসে লিমা নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে।

মাছিহাতা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, মূলত অপবাদ সইতে না পেরেই লিমা আত্মহত্যা করেছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোখলেছুর রহমানও একই অভিযোগ করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

লিমার মা নূরুন্নাহার বেগম অভিযোগ করেন, উদয় ও অন্যান্যরা তার মেয়েকে প্রকাশ্যে মারধর করেছে। আর এ অপমান সইতে না পেরেই সে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় তিনি সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।

বিষয়টি জানতে মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে উদয় কিংবা তার বাবা রহিজ খানকে পাওয়া যায়নি। তবে উদয়ের মা লুৎফা বেগম বলেন, আমার ছেলে কাউকে মারধর করেনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন জানান, লিমার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।