৩০ বাস জিম্মায় নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

লেখক:
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

অবরোধের আট ঘণ্টা পর যাত্রীবাহী ৩০টি বাস বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আটকে সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত বাসের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত বাস শিক্ষার্থীদের জিম্মায় থাকবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার ও বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে নিরাপত্তার দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে উভয় প্রান্তে দীর্ঘ যানবাহনের লাইন পড়লে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। এমনকি এই মহাসড়কে মাইশার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগীয় প্রশাসনের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও বাস মালিক পক্ষের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হওয়ার দাবিতে অনড় থাকায় অবরোধ চলতে থাকে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর যাত্রীবাহী বাস ছাড়া অন্য সব যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হয়।

নিহত মাইশা নেত্রকোনার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা ঢাকায় বসবাস করেন। ঢাকায় আজ রাতে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেন তার বাবা।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়ক বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটামুখী এবং কুয়াকাটা থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে। ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যানবাহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। তারা বারবার খবর নিচ্ছিলেন কখন শেষ হবে এ অবরোধ। কিন্তু কোনোভাবেই শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে না নেওয়ায় দীর্ঘ হতে থাকে যানবাহনের লাইন।

দুপুর ১২টার দিকে নিয়ে আসা হয় মাইশার লাশবাহী গাড়ি। গাড়ি থাকাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়কে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় মাইশার বাবা, মামা, ভাই, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী এবং বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী, জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন মাইশার মা। তার সঙ্গে দেখা করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুচিতা শারমিন। উপাচার্য তার সঙ্গে দেখা করে সান্ত্বনা দেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মাইশার মা।

আটক করা বাস

উপাচার্য সুচিতা শারমিন বলেন, মাইশার পরিবারকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। তারপরও শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, তার বেশিরভাগ বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হয়েছে। বরিশাল-পটুয়াখালী ও বরিশাল-ভোলা সড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সব দাবি বাস্তবায়ন হবে। এমনকি যাদের বিচার চাওয়া হয়েছে, তাদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।

এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী। তিনি নিশ্চিত করেন, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানিয়েছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে গতিরোধকের কাজ শুরু হয়েছে। ফুটপাত ও ওভারব্রিজের জন্য অর্থের প্রয়োজন।

এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলীকে সামনে আনেন। তিনি বলেন, অর্থের বিষয় থাকায় কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। সময় না দিলে কোনোভাবেই এ কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

পরে বিভাগীয় কমিশনার জানান, মন্ত্রণালয়ে তার কথা হয়েছে। তারাও প্রকল্প আকারে পাঠানোর জন্য বলেছেন। চালক ও হেলপারের গ্রেফতারের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পুলিশ কমিশনার তাদের গ্রেফতার নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে একাধিকবার কথা হয়েছে।

পরে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের যেসব যৌক্তিক দাবি, তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন এবং মালিক পক্ষের একজনকে আজকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির করার দাবি জানান। না এলে কোনোভাবেই সড়ক থেকে তারা উঠবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপর থেকে সড়ক অবরোধ চলতে থাকে। সন্ধ্যায় ৬টার দিকে উভয় প্রান্ত থেকে সব যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হলেও বাস আটকে রাখা হয়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এবং ঘাতক বাসের মালিককে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে ৩০টি বাস ক্যাম্পাসে আনা হয়। ঘাতক বাসের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত বাসগুলো শিক্ষার্থীদের জিম্মায় থাকবে।

জানা গেছে, বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-ভোলা সড়ক পারাপারের সময় নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস নামে বাসটি বেপরোয়া গতিতে এসে মাইশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় তিনি সড়কে ছিটকে পড়েন। এরপর বাসটি পালিয়ে যাওয়ার সময় মাইসাকে চাকায় পিষ্ট করে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ঘাতক বাসটিকে নগরীর রূপাতলী এলাকায় আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বাসের চালক, হেলপার ও মালিকের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে সড়ক অবরোধের ঘোষণ দেন তারা।