#

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখির খামার গড়ে উঠেছে। অনেকটা শখের বশেই বাড়িতে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহাবুবুল আলম নাঈম।

মাত্র নয় মাস যেতে না যেতেই তিনি দেখেন লাভের মুখ। এরপর পৌর শহরের সিকদার সড়ক এলাকার নিজবাড়িতে গড়ে তোলেন নূর জাহান লাইভস্টক অ্যান্ড এগ্রো নামের একটি খামার।

শুধু কোয়েল পাখি নয় তার খামারে রয়েছে দেশি হাঁস, মুরগি ও কবুতর। পাশাপাশি নিজের পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করছেন তিনি। তবে কোয়েল পাখি পালন লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলেন খামার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের উপযোগী। কোয়েলের মাংস ও ডিম মুরগির মাংস ও ডিমের মতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটি গৃহপালিত পাখি। কোয়েল পাখির আদি জন্মস্থান জাপানে। পরবর্তীতে এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

কোয়েল খামারি মাহাবুবুল আলম নাঈম বলেন, মাত্র নয় মাস আগে নরসিংদীর একটি খামার থেকে ৬০০ কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনে আনি। তখন অনেকেই বলেছে বাচ্চাগুলো বাঁচবে না, মারা যাবে। তাদের কথা শুনে অনেক কষ্ট হয়েছিল তখন। যখন বাচ্চাগুলো একটু বড় হতে শুরু করেছে তখন খুশিতে মনটা ভরে যায়। ধীরে ধীরে বড় হয় বাচ্চাগুলো সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে বড় হয় আমার স্বপ্নগুলো। একপর্যায়ে বাচ্চাগুলো বড় হয়ে ডিম পাড়া শুরু করে। তখন আমার কষ্ট দূর হয়ে যায়।

মাহাবুবুল আলম নাঈম বলেন, প্রথমে বাচ্চাগুলো কিনতে আমার সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমার খামারে ১২০০ কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ ডিম দেয়। ডিমগুলো স্থানীয় বাজারে ২ টাকা পিস বিক্রি করি। সেই হিসাবে আমার প্রতিদিন আয় ১৬০০ টাকা। মাস শেষে দেখা যায়, কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করে আমার আয় হয় ৫০ হাজার টাকা।

নাঈম আরও বলেন, দিন দিন কোয়েল পাখির ডিম ও মাংসের চাহিদা বাড়ছে। কম পুঁজি নিয়ে কোয়েলের খামার তৈরি করা যায়। কোয়েলের আকার ছোট বলে এদের লালন-পালনের জন্য জায়গাও কম লাগে। একটি মুরগি পালনের স্থানে মোটামুটিভাবে ১০ থেকে ১২টি কোয়েল পাখি পালন করা যায়। এই পাখির রোগব্যাধি নেই বললেই চলে। সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল পাখি ডিম দিতে শুরু করে। এরা ৩৬৫ দিনে ৩২০ ডিম দেয়।

নাঈমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন মাহাবুবুল আলম নাঈম। এরপর একটি ইন্টারন্যাশনাল এনজিওতে প্রজেক্টের আওতায় চাকরি করেন। পরে বেকার হয়ে যান নাঈম। কিছুদিন পর বাজার থেকে শখের বসে দুটি কোয়েল পাখি কিনে লালন-পালন শুরু করেন। একপর্যায়ে তার মাথায় আসে, অধিকহারে এই পাখি পালন করলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। সেই থেকেই তার পথ চলা শুরু। এখন তার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকানুল ইসলাম বলেন, নাঈমের কোয়েল চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই পাখির ডিম ও মাংস পুষ্টিকর হওয়ায় এলাকার অনেকে খাওয়ার জন্য বাসায় নিয়ে যান। এছাড়া দামও খুব কম। আমার মতে, কোয়েলের খামার করে বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।

কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কোয়েলের ডিম ও মাংসে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। কোয়েলের ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

কলাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে নাঈম তার খামারের বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করি। অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে কোয়েল পালন করা যায়। এর মাংস, ডিম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এ কারণে দিন দিন কোয়েল পালনে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন