শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১ রান। খুলনা টাইগার্সের হাতে ছিল ৩ উইকেট। কিন্তু মেহেদি হাসান রানার তোপের মুখে পেরে ওঠেনি মুশফিকুর রহিমের দল। ১৯তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ফরচুন বরিশালকে জেতালেন রানা। একমাত্র ভরসা হয়ে ক্রিজে থাকা মুশফিকের আউটে খুলনার ইনিংসে ইতি ঘটে।
শুরুতে মুজিবুর রহমানের ঘূর্ণি আর শেষে রানার তোপ; দুইয়ের মিশেলে জয়ের পথে থেকেও পথ হারায় খুলনা। শনিবার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ১৪২ রানের টার্গেট দেয় বরিশাল। রান তাড়া করতে নেমে ১৯ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট হয় খুলনা। ১৭ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিবের দল।
এর মধ্য দিয়ে জয়ে ফিরলো বরিশাল। চার ম্যাচের মধ্যে তাদের সমান দুটি করে জয় ও হার। এদিকে আজ জিতে এগিয়ে যেত পারতো খুলনা, তাদেরও চার ম্যাচে সমান দুটি করে জয় ও হার। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন রানা। চলতি আসরে প্রথম ম্যাচে খেলতে নামা রানার হাতে ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
অথচ রানার পরিবর্তে নায়ক হতে পারতেন মুশফিক নিজেই। মুজিবের ঘূর্ণিতে শুরুতেই যখন কাঁপছিল খুলনা তখন হাল ধরেন মুশফিক। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ক্রিজে এসে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। তখন দলের স্কোর ৩ উইকেটে ৩৬। এক প্রান্ত আগলে রেখে খেছিলেন তিনি। সিঙ্গেল-ডাবলস খেলে চেষ্টায় ছিলেন ম্যাচ সহজের। কিন্তু সঙ্গী হিসেবে কাউকেই পাচ্ছিলেন না। অপর প্রান্তে ছিলে উইকেটের মিছিল। মাঝে ইয়াসির আলীর সঙ্গে জুটি সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। ইয়াসিরের (২৩) আউটে ভেঙে যায় ৪৬ রানের জুটি।
এবার পেরেরাকে নিয়ে হাল ধরেন খুলনার অধিনায়ক। মুজিবের ওভারে ১ ছয় ১ চারে ১২ রান নিয়ে চাপমুক্ত করেন পেরেরা। শফিকুল ইসলামের করা পরের ওভারেও এভাবে খেলতে গিয়ে ফেরেন সাজঘরে। লং অফে দারুণ ছয়ের পর ধরা পড়েন ডিপ এক্সট্রা কাভারে। তিনি আউট হন ৯ বলে ১৯ রান করে। পেরেরা আউট হয়ে গেলে আর কোনো জুটি দেখেনি দুই অঙ্কের মুখ। মুশফিক নিজেদের ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ছিলেন, কিন্তু লাভ হয়নি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হন ৩৬ বলে সর্বোচ্চ ৪০ রান করে। এই ওভারের প্রথম বলে জীবনও পেয়েছিলেন স্কয়ার লেগে।
রানার মতো প্রথম খেলতে নামা মুজিব ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। দুই ওপেনারকে শুরুতে ফিরিয়ে তিনি সহজ করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া লিনটট নেন ২ উইকেট।
এর আগে পুরো ব্যাটিং অর্ডারে ওলটপালট করে খুলনার বিপক্ষে লড়াইয়ে নামে বরিশাল। চার পরিবর্তন নিয়ে খুলনার বিপক্ষে খেলতে নামা বরিশালের ব্যাটিং লাইনআপে দেখা যায় ব্যাপক রদবদল। আগের তিন ম্যাচে ওপেন করা শান্ত একাদশে থাকলেও ব্যাটিংয়ে আসেন পাঁচে, আর সৈকত আলী বাদই পড়েন। মুশফিকদের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে আসেন সবশেষ দুই ম্যাচে পাঁচে নামা ক্রিস গেইল ও শেষ দিকে ব্যাটিং করে জ্যাক লিনটট। লিনটট (১১) আউট হলে ওপেনিং জুটি ভাঙে ২৬ রানে। আগের তিন ম্যাচে ওপেনিং জুটি ১বার বিশের ঘর পেরিয়েছিল আর দুবার দুই অঙ্কের ঘরও ছুঁতে পারেনি।
তবে গেইল ছিলেন এক প্রান্তে দেওয়ার হয়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে সর্বোচ্চ ৪৫ রান। ২ ছয় ও ৪ চারে এ রান করেন গেইল। শুরুতে গেইলের এই ইনিংস না হলে বিপদ বাড়তো বরিশালের।
তিনে আসেন জিয়াউর রহমান। এদিন নিজের সহজাত ব্যাটিং করতে পারেননি জিয়া। খেলেছেন ডট বল। ১ ছয়ে ১৩ বলে ১০ রান করেন। দুই ধাপ এগিয়ে আসা নুরুল হাসান সোহানও এদিন ছিলেন অকার্যকর (১১ বলে 8)। মাঝে জুটি গড়েন ওপেনিং থেকে পাঁচে নামা শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। দুজনের জুটি থেকে আসে ৩১ বলে ৩৫ রান। দুজনের থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। শান্ত ১৯ ও হৃদয় আউট হন ২৩ রানে।
তিন থেকে সাতে আসে সাকিবকে দেখা গিয়েছিল সাবলীল। এক্সট্রা কাভারে দারুণ চারে খোলেন রানের খাতা। পরের বলেও হাঁকিয়েছিলেন বাউন্ডারি। তবে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। থিসারা পেরেরার বলে স্কয়ার লেগে আন্দ্রে ফ্লেচারের দারুণ ক্যাচে ফেরেন সাজঘরে। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ বলে ৯ রান। সাকিবের আউটের পর তিন উইকেট হারিয়ে পরবর্তী ১৬ বলে বরিশাল তোলে ১১ রান।
এদিন দারুণ ফিল্ডিং করেছে মুশফিকের দল। ফেলচার ছাড়াও বাউন্ডারি লাইনে পেছন দিকে লাফিয়ে ইরফান শুক্কুরের ক্যাচ ধরেন মেহেদী হাসান। তিনি বোলিংও করেছেন দারুণ, ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাব্বী, থিসারা পেরেরা ও ফরহাদ রেজা।