ছাত্র-জনতার ২৩ দিনের নজিরবিহীন আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এখন ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ নিয়ে জল্পনা চলছে। এক্ষেত্রে যে দেশটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে, তা হলো যুক্তরাজ্য। এর মধ্যেই শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য (এমপি) রূপা হক।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ডে এক নিবন্ধে লেবার পার্টির এই এমপি লেখেন, শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না।
তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ কতটা ‘বিশৃঙ্খল’ ছিল তা নিয়ে গান গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন। গত সপ্তাহে তিনি আবার সঠিক প্রমাণিত হলেন। সেই সঙ্গে ইরাকের বিখ্যাত নেতা সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতাচ্যুতির মতো ঘটনার প্রতিফলনও দেখা গেছে। ‘জাতির পিতা’ বলে ঘোষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, কুশপুতুল পোড়ানো হলো, যা ঢাকা থেকে টাওয়ার হ্যামলেট (যুক্তরাজ্যের একটি পৌরসভা) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনকে তিয়ানআনমেন স্কয়ারের সঙ্গে তুলনা করে রূপা হক লিখেছেন, ‘স্বৈরাচারী’ কন্যা শেখ হাসিনা দেশটির আয়ুষ্কালের বড় অংশই শাসন করেছেন (সর্বত্র তার বাবার ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম স্থাপন নিশ্চিত করে)। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, শেখ হাসিনা শুধু শাড়ি পরা একজন বৃদ্ধাই নন, ‘বর্বর’ শাসকও। সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে তিনি ভারতে নির্বাসিত হন।
রূপা হক লিখেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শেখ হাসিনার শাসনামল ব্যাপকভাবে সমালোচিত। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নিজস্ব অভিবাসনসংক্রান্ত রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের এমন একজনকে আশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি রয়েছে। অনেক বাংলাদেশি মনে করেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
ছাত্রদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে থাকা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে রূপা হক লিখেছেন, ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন বাংলাদেশের হাল ধরেছেন। সম্প্রতি জনপ্রিয়তার ভয়ে তাকে (ড. ইউনূস) কারাবন্দি করার ষড়যন্ত্রও করেছিলেন শেখ হাসিনা।
বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিভিন্নভাবে বিরোধীদের ‘ইসলামিস্ট’ ট্যাগ দিয়ে বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে তার মায়ের প্রতি অকৃতজ্ঞতার জন্য বাংলাদেশিদের তিরস্কার করেছেন। আবার তিনি এও দাবি করেন যে, তার মা বাংলাদেশে ফিরে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সবশেষে রূপা হক লেখেন, তবে ঝুঁকি এখনো থেকেই যাচ্ছে। এরপরও আশা করি, সেখানে গণতন্ত্র ফিরবে। দুই পরিবারের চিরবৈরিতা যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস রূপায়ন করে, সেখানে ভবিষ্যতে যখন সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে, তখনই সবকিছু নতুন করে শুরু করার উৎকৃষ্ট সময় হবে।
৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা, সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সেই থেকে তারা ভারতেই আছেন। ভারত থেকে শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন- এমন খবর দিতে থাকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন বলেও খবর আসে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো তথ্য দেয়নি।
এদিকে, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য। চলতি বছরের ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে তিনিও টানা চতুর্থবারের মতো লেবার পার্টি থেকে জয়ী হন। তবে শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়া, না চাওয়ার বিষয়ে টিউলিপের কাছ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি।