বরিশাল : ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ । আর মোকামগুলোতেও ফিশিং বোটে (সাগরে মাছ ধরার নৌ-যান) আসতে শুরু করেছে প্রচুর ইলিশ । তাই সাগরের ইলিশ মাছে এখন কানায় কানায় পূর্ন বরিশাল পোর্টরোডস্থ মৎস অবতরন কেন্দ্র।
পর্যাপ্ত পরিমানে ইলিশ আসায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার মৎস শ্রমিকরা। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, ফিশিং বোট থেকে মাছ খালাশে ব্যস্ত তারা। এ যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। এদিকে সাগরের ইলিশের প্রচুর আমদানি থাকায় পাইকারি এবং খুচরা বাজারে পূববর্তী সময়ের চেয়ে মাছের দামও এখন সস্তা।
কীর্তনখোলা নদীর তীড়ে অবস্থিত পোর্ট রোড মৎস অবতরন কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে। পুরো মোকাম জুড়ে পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী সবাই ব্যস্ত ইলিশ সংগ্রহে।
জানাগেছে, বুধবার বরিশাল পোর্ট রোড মৎস অবতরন কেন্দ্রে প্রায় আড়াই হাজার মন ইলিশ মাছ এসেছে। আর এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ফিশিংবোট ভোলা জেলার অর্ন্তগত বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে এই ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে। এছাড়াও কলাপাড়ার মহিপুর মৎস বন্দর থেকে মোকামগুলোতে ট্রাকে ট্রাকে আসতে শুরু করেছে সাগরের ইলিশ।
আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাগরে মাছ ধরতে শুরু করেছে জেলেরা। তাছাড়া বর্তমানেও আবহাওয়া ভালো নেই । যার ফলে আশানুরুপ মাছ পায়নি বলেও জানায় জেলেরা। আরো দুই একদিন সাগরে থাকতে পারলে আরো বেশ কিছু মাছ ধরতে পারতো।
এদিকে কলাপাড়ার মহিপুর বন্দর থেকে আসা বজলু নামের আরেকজন জানান, মাছের আমদানি ভালো কিন্তু দাম অনেকটা কম। তাই তিনি আরেকটু বেশি দাম পাওয়ার আশায় আজকে বিক্রয় করবেন না। গত কয়েকদিনে দিনে সাগর থেকে তিনি ৫০ মন ইলিশ ধরেছেন।
ভোলা জেলা থেকে আসা মো. ইউসুফ মাঝি জানান, ইলিশের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। সাথে সাথে মাছের আমদানিও ভালো। কিন্তু প্রচুর মাছ আসায় দাম অনেকটা কমে গেছে। গত কয়েকদিনে সাগর থেকে প্রায় ৬০-৭০ মন ইলিশ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু বরিশালে এসে মাছের দাম শুনে হতাশ হয়েছেন। ইলিশের মূল্য আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক কমে গেছে।
তিনি আরো জানান, গত কয়েকদিন ধরে ২৪ জন জেলে তার বোটে সাগরে মাছ ধরেছে। এতে অন্যান্য আনুষঙ্গিক মিলিয়ে যে খরচ হয়েছে, তাতে আহরনকৃত সব মাছ বিক্রি করে খরচের সমতূল্য করাই দায় হয়ে যাচ্ছে।
ইউসুফ জানান, আবহাওয়া খারাপের ফলে মাছ কম পাওয়া গেছে। তবে সাগরে প্রচুর মাছ রয়েছে। তাই আবহাওয়া ভালো থাকলে আরো কিছু সংখ্যক মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে তিনি প্রতি মন ১৯ হাজার টাকা দামে বিক্রয় করছেন।
এদিকে মাছের আমদানি বৃদ্ধিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। বরিশাল পোর্টরোডস্থ মৎস অবতরন কেন্দ্রে হাবিব নামে একজন শ্রমিক জানান, মাছের আমদানি শুরু হয়ে গেছে। এখানকার প্রায় শতাধিক লেবারের অলস সময় পার করার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমদানি যতো বাড়বে ততো কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাবে। শ্রমিকদের আয়ও বাড়বে।
পাইকারি ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, ইলিশ তো কাঁচামাল। এর দর ওঠানামা করে। মাছ আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে দামও একটু কম রয়েছে।
সাগরের ইলিশের আমদানির বিষয়ে বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ইজারাদার ও মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, সাগরের বেশিরভাগ ইলিশের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রামের হয়ে থাকে। গত বছর এ সময়ে ৪ হাজার মণ ইলিশ এসেছে বরিশালের পোর্ট রোডস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। আর এখন আসছে মাত্র দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ। তাও আমাদের স্থানীয় নদীর নয়, সাগরের ইলিশ।
তিনি আরো বলেন ,বর্তমানে সাগরের ইলিশ মন প্রতি ১৯ থেকে ২৩ হাজার টাকা দ্বরে বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় নদীর ইলিশ মাছ ( এলসি) মন প্রতি ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা দ্বরে বিক্রয় হচ্ছে। তবে স্থানীয় নদীর মাছ এখনো তেমন একটা আশা শুরু করেনি।
টুটুল বলেন, আগে অভিযান ছাড়া মাছের যে উৎপাদন হত। কিন্তু বর্তমানে এত অভিযান পরিচালনার করার পরেও সেই মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। দিন দিন ইলিশের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
জেলা মৎস কর্মকর্তা (ইলিশ ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, গত মঙ্গলবার (৭ আগষ্ট) কিছু ইলিশ মোকামে আসলেও আজ বুধবার (৮ আগষ্ট) প্রচুর পরিমানে মাছ এসেছে। তাছাড়া জেলেরা জানিয়েছে, সাগরে প্রচুর ইলিশ রয়েছে, কিন্তু আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় তারা সেটা ধরতে পারছে না।
ইলিশ মাছের মূল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্বের তুলনায় জেলেদের জালে ইলিশ ধর পড়েছে এবং সরবরাহ বেড়েছে ৩ থেকে চার গুন, তাই দাম একটু কম।