বরিশালে আওয়ামী লীগের ৬০২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ইউএনও এবং পুলিশের দায়ের করা মামলা দুটি প্রত্যাহার কিংবা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি গত দুই মাসেও।
গত ১৮ আগস্ট রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন কোতয়ালী থানায় মামলা দুটি দায়ের হয়। পরে মামলা দুটি তদন্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার জন্য গত ২২ আগস্ট গভীর রাতে বিভাগীয় কমিশনারের বাসায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সমঝোতা বৈঠক হয়েছিল প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের।
ওই বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা দুটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির কথা থাকলেও গত ২ মাসে অগ্রগতি হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রশাসনের সাথে তাদের সুসম্পর্ক আছে। তবে পুলিশ এখনো মামলা দুটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি। এদিকে, মামলা দুটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ব্যানার অপসারণ নিয়ে গত ১৮ আগস্ট রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র বাসার আনসার সদস্যদের সাথে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করে আনসার সদস্যরা।
খবর পেয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের কয়েকশ কর্মী জড়ো হয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পরদিন ১৯ আগস্ট কোতয়ালী মডেল থানায় উপ-পরিদর্শক শাহজালাল মল্লিক বাদী হয়ে একটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বাদী আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলায় নামীয় ও অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৬০২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। দুই মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়েদ আহমেদ মান্না এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরসহ মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তিন দফায় আদালত থেকে জামিন পায় তারা।
এদিকে, এই দুই মামলার পাল্টা হিসেবে ২২ আগস্ট সদর ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক শাহজালাল মল্লিক, ইউএনও’র বাসার ৫ আনসার সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী মামলা করেন উপজেলা পরিষদের গুলিবিদ্ধ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন।
একই দিন সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার বাদী হয়ে সদর ইউএনও ও তার বাসার নিরাপত্তার দায়িত্বরত ৫ আনসার সদস্যের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে একই আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। আদালত এই মামলা দুটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
ইউএনও ও পুলিশের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা দুটি মামলা হলে টনক নড়ে সরকারের। সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে ২২ আগস্ট গভীর রাতে বিভাগীয় কমিশনারের বাসায় সিটি মেয়রসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমঝোতা বৈঠক হয়।
পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ ও ইউএনও’র মামলা দুটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বলে ওই রাতেই জানিয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা।
পুলিশ ও ইউএনও’র মামলা নিষ্পত্তি হলে সিটি কর্পোরেশন এবং প্যানেল মেয়রের মামলাও প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ওই সমঝোতার পর ২ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ এবং ইউএনও’র মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ওই দুই মামলার আসামি সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ২ মাসেও দুটি মামলার চার্জশিট-ফাইনাল কিছুই দেয়নি পুলিশ। এখন পুলিশ কি করে সেই অপেক্ষায় আছি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, পুলিশ মামলা দুটির প্রসেস রেডি করেছে। তবে এখনো তারা আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, পুলিশ-প্রশাসনের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমঝোতা এবং সুসম্পর্ক আছে। পুলিশ অবশ্যই মামলা দুটি নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতি রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিন) আলী আশরাফ ভূঁঞা বলেন, মামলা দুটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে নির্ধারিত দিনক্ষণ বলেননি তিনি।
এদিকে, সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন এবং প্যানেল মেয়রের মামলায় পিবিআই এখন পর্যন্ত আদালতে প্রতিবেদন দেয়নি বলে জানিয়েছেন একটি মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম খোকন।