বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ এখন ছুটছে কর্মস্থলে। যারা ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে কয়েক দিন বেশি সময় কাটিয়েছেন তারা আগামীকাল কর্মস্থলে যোগ দিতে আজ ফিরছেন। ঈদের দুদিন পর থেকেই বরিশালের বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ নৌ ও সড়ক পথে যাত্রীদের অত্যধিক চাপ দেখা গেছে। বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালেও ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। পন্টুনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সন্ধ্যার পর লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও দুপুর থেকেই রাজধানী ঢাকাগামী শত শত নারী-পুরুষ পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে টার্মিনালে চলে আসেন। টার্মিনাল, পন্টুন, লঞ্চে যাত্রী আর যাত্রী।

সড়ক পথেও ছিল একই অবস্থা। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বিরামহীনভাবে বাসে ঢাকামুখী যাত্রী নেয়া হচ্ছে। তারপরও বাসে সিট না পেয়ে অনেককে দাঁড়িয়ে বা ইঞ্জিন কাভারে বসে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এছাড়া বরিশাল থেকে বিআরটিসি ও মাইক্রোবাসে অতিরিক্ত যাত্রী কাওড়াকান্দির উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ পর পর ছেড়ে যাচ্ছে।

বিকেলে বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, স্রোতের মতো মানুষ ছুটছে ঢাকাগামী লঞ্চের নির্ধারিত পন্টুনের দিকে। পন্টুনে থাকা ১৮টি লঞ্চ বিকেল ৫টার মধ্যে যাত্রীতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে। লঞ্চের ছাদ এমনকি প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের কেবিনের সামনের স্থানও দখল করে নিয়েছে যাত্রীরা।

বছরের অন্যান্য সময় বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি বিলাসবহুল লঞ্চ ছেড়ে যায়। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে ১৮ থেকে ২২টি লঞ্চের ব্যবস্থা করেছে লঞ্চ মালিক সমিতি। তারপরও আজ কোনো লঞ্চে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শনিবার রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ধারণ ক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে ১৮টির মধ্যে ১৩টি বিশাল লঞ্চ ছেড়ে গেছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। এছাড়া ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরও পাঁচটি লঞ্চ। প্রতিটি লঞ্চের ডেক ও কেবিন ছিল যাত্রী ভর্তি।

নদী বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দুটি সরকারী জাহাজে ছিল উপচে পড়া যাত্রী। এছাড়া সকালে এবং বিকেলে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় গ্রীন লাইন নামে দুটি ও অ্যাডভেঞ্চার নামে আরও একটি নৌ যান।

লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে , ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ সামলাতে নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি ২০ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ সার্ভিসের (ডবল ট্রিপ) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাত্রী চাপ বেশি থাকলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পরে নতুন সপ্তাহে প্রথম কর্মদিবস শুরু হবে আগামীকাল রোববার। ঈদ, জাতীয় শোক দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ এবার টানা ৯দিন ছুটি উপভোগ করেছেন কর্মজীবীরা। কাল বেসরকারি চাকরিজীবীদের ছুটিও শেষ। রোববার সরকারি-বেসরকারি অফিস খোল থাকবে। এদিন অফিসে হাজির হতে এক প্রকার যুদ্ধ করেই দক্ষিণাঞ্চল ত্যাগ করেছেন কর্মজীবীরা।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ১০টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকায় গেছে। গতকাল শুক্রবার যাত্রীর চাপ আরও বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে ১৭টি লঞ্চ। শনিবার ২১টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় গেছে। প্রতিটি লঞ্চ ছিল যাত্রী বোঝাই।

বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের বরিশাল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু জাগো নিউজকে বলেন, যাত্রী পূর্ণ হলেই লঞ্চগুলোকে পন্টুন ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী বাঝাই ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিনদিন নদী পথে যাত্রীদের ভিড় থাকবে।

বরিশাল নৌবন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নৌপথে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে লঞ্চঘাট এলাকায় নৌ-পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর। এছাড়া রোভার ও বয়েজ স্কাউট এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নৌবন্দরে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা ও ভোগান্তি লাঘবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করছে