বরিশাল:: বরিশাল জেলাসহ বিভাগ জুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ। তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের থেকে এর কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও ধারনা করা হচ্ছে আক্রান্ত সংখ্যা ১০ হাজারের কম নয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে চলতি অক্টোবর মাসে। আক্রান্ত যেমনি বাড়ছে মৃত্যুও তেমনি বাড়ছে।
চলতি বছরে মোট ২৮ জন মারা গেলেও অক্টোবর মাসেই মারা গেছেন ১০ জন।
সূত্র মতে, বরিশালে অক্টোবর মাসের গেলো ২০ দিনে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত ১ হাজর ৪শত ৬০ জন। আর বছর জুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩শত ৬৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে ২৮ জনের মৃত্যু হলো।
আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বর্তমানে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গুলোতে চিকিৎসাধীন আছেন ৩১১ জন। তবে বেসরকারি হাসপাতালে গুলোতে এর সংখ্যা দ্বিগুন হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এবার বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসে বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চলতি বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ও দীর্ঘ সময় তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় শুরু সাত মাস ডেঙ্গু খুব একটা মাথাচাড়া দেয়নি। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আর অক্টোবরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অক্টোবরের ২০ দিনে বিভাগে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছর বরিশালে বিভাগে মৃত্যু হওয়া ২৮ জনের মধ্যে বরিশাল জেলাতে ১১ জন, বরগুনায় ৬ জন, পটুয়াখালী জেলায় ৬ জন, পিরোজপুর জেলায় ৪ জন ও ভোলা জেলা ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আক্রান্তের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশী আক্রন্ত হচ্ছে বরগুনা জেলায়। সেখানে চলতি বছর ১ হাজার ২শত ১১ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছে। বরিশাল জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৮শত ৫১ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। পটুয়াখালীতে ৭শত ৯৮ জন। পিরোজপুর জেলায় ৫শত ৭৪ জন। ভোলায় ৪৩২ জন ও ঝালকাঠী জেলায় ১১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়াতপুর, শাতক্ষিরা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩শত ৪১ জন ভর্তি হন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর শুরু থেকে বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। জুনে তা চূড়ায় ওঠে। কিন্তু এবার বছরের শুরুতে প্রকোপ কম থাকলেও সেপ্টেম্বরে এসে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে। আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে যায়। এখনো তা অব্যাহত আছে।
গত বছর এই বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৮ হাজার ১৬৬ রোগী। মৃত্যু হয়েছিল ২১৪ জনের।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল বলেন, বরিশালে গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগী কম থাকলেও শেষ সময়ে এসে তা বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগের। মূলত বর্ষা প্রলম্বিত হওয়ায় মৌসুমের শেষ সময়ে এসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।