ভারতের বিখ্যাত স্থাপনা তাজমহল। উত্তর প্রদেশের আগ্রায় অবস্থিত এ স্থাপনাটি সারা বিশ্বের কাছেই এখনো বিস্ময় হয়ে রয়েছে। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর ৭০ লাখ লোক আসে তাজমহল দেখতে। অক্টোবর থেকে তাজমহলে পর্যটকের স্রোত নামতে শুরু করে। চলে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, অবহেলা ও দূষণ আজ একে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।
শামসুদ্দিন খান ৩০ বছর ধরে তাজমহলে ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করছেন। জনা পঞ্চাশেক বিশ্বনেতাকে তাজমহল ঘুরিয়ে দেখানোর সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর। কণ্ঠে আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, তিন দশকে তাঁর কালো চুল ধীরে ধীরে সাদা হয়েছে, আর শ্বেত তাজমহল ধীরে ধীরে হয়েছে কালো। এর জায়গায় জায়গায় এখন ফাটল চোখে পড়ে। ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে মার্বেল।
সতেরো শতকে সম্রাট শাহজাহান যমুনার তীরে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধির ওপর তৈরি করেন তাজমহল। মমতাজ তাঁর চতুর্দশ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। যমুনা নদীর তীরে এই ইমারত নির্মাণে শাহজাহান রাজস্থান থেকে আনান বিশেষ একপ্রকার মার্বেল পাথর। এই মার্বেলের বিশেষত্ব হলো, সকালে একে গোলাপি দেখায়। বিকেলে শাদা। সন্ধ্যায় দুধেল সাদা। আর এর উজ্জ্বলতা চোখ ধাঁধিয়ে দিত।
এখন ক্রমেই দ্যুতি হারাচ্ছে তাজমহল। এর ভিতও দুর্বল হয়ে পড়ছে। যমুনার ভয়াবহ দূষণ এর ভিত দুর্বল হওয়ার কারণ। এর ভিত্তিভূমিতে ১৮০টি কূপ ও পাটাতনে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো সবল রাখতে সারা বছর পানি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। ইতিহাসবিদ রামনাথ বলেন, বেশির ভাগ মোগল স্থাপনা বাগানের মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু তাজমহল নির্মিত হয়েছে বাগানের কোনায়। যমুনার পানি ভিত্তিতে সরবরাহ করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। যমুনায় পানির প্রবাহ না থাকায় ভিত্তির কাঠগুলো ভেঙে পড়ছে। তাজমহলের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পুরো স্থাপনা ধসে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইউনেসকো ভারত সরকারকে এক প্রতিবেদনে জানায়, তাজমহল হলুদ হয়ে পড়ার কারণ অ্যাসিড বৃষ্টি।