 
                                            
                                                                                            
                                        
২০০৬ সালে ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৫৮ রানের লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটি ছিলো সিরিজের প্রথম টেস্ট। প্রায় এক যুগ পর মিরপুরেও অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে লিড পেল বাংলাদেশ। তা ৪৩ রানের। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সোমবার (২৯ আগস্ট) সেই লিড ৮৮ রানে টেনে নিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ।
এদিন বাংলাদেশের ২৬০ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ২১৭ রানে। রেকর্ড ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। মেহেদী মিরাজ পেয়েছেন ৩টি। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেছেন ওপেনার ম্যাট রেনসো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান করেছেন অ্যাস্টন অ্যাগার।
অস্ট্রেলিয়া অলআউট হওয়ার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ওপেন করতে নামেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। এই জুটিতে ৪৩ রান পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো ইনিংসেও ব্যর্থ হয়েছেন সৌম্য। বিদায় নিয়েছেন ব্যক্তিগত ১৫ রানে। তামিম অপরাজিত রয়েছেন ৩০ রান নিয়ে।
সৌম্য আউট হওয়ার পর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামানো হয় স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। রানের খাতা না খুলতে পারলেও তিনি অপরাজিত রয়েছেন। এই ইনিংসে মোট ২২ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। দিনশেষে মুশফিকুর রহিমের দলের সংগ্রহ ১ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান। আগের ইনিংসের ৪৩ রানসহ টাইগারদের মোট লিড দাঁড়িয়েছে ৮৮ রানের।
প্রথম দিন (রবিবার) বাংলাদেশের ২৬০ রান কম হয়ে গেল কিনা আলাপটা জমবার আগেই শেষ বিকেলে অসিদের তিন উইকেট তুলে নিয়েছিলেন সাকিব-মিরাজরা। এশিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়ানদের হয়ে সবচেয়ে যিনি ভালো খেলেন সেই স্টিভেন স্মিথ উইকেটে ছিলেন বলেই ভরসা পাচ্ছিল সফরকারীরা, আর শঙ্কা ছিলো বাংলাদেশের। সেই শঙ্কা দূর করতে খুব বেশি সময় নেননি মিরাজ। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই অসি কাপ্তানকে সাজঘরে ফেরান তিনি।
ইনিংসের ১২ আর দিনের তৃতীয় ওভারের শেষ বলটি খেলতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন স্মিথ। পায়ের ব্যবহার বাড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ড্রাইভ। কিন্তু মিরাজের বলটিতে ব্যাট লাগাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। সোজা গিয়ে তার ষ্টাম্প উপড়ে ফেলে।
৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন রেনশ আর হ্যান্ডসকম্ব। তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। পিটার হ্যান্ডসকম্বকে লেগ বিফোরে ফাঁদে ফেললে ১০২ রানে ৫ উইকেট হারায় সফরকারীরা। লাঞ্চের ঠিক আগে সবচেয়ে মূল্যবান উইকেটটাই নেন সাকিব আল হাসান। বাকি অস্ট্রেলিয়ানদের ব্যর্থতার দিনে ভোগাচ্ছিলেন ম্যাথু রেনশো। তাকে স্লিপে সৌম্য সরকারকের ক্যাচ বানান সাকিব। এক ওভার আগেই তাইজুলের বলে স্লিপে তার ক্যাচ ছেড়ে আফসোসে পুড়েছিলেন সৌম্য। সে আফসোস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১২৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে লাঞ্চ করতে যায় অসিরা।
লাঞ্চে খেয়ে দেয়ে আরও ফুরফুরে মিরাজ। তার উইকেটমুখী বল ব্যাট প্যাডে খেলতে গিয়েছিলেন বাঁহাতি ম্যাথু ওয়েড। বল প্যাডেই লাগল খালি। আম্পায়ার নাইজল লঙ সাড়া দিয়ে দেন। রিপ্লেতে দেখা গেছে রিভিউ নিলে বাঁচতে পারতেন। তিন নম্বর শিকার হয়ে যায় মিরাজের। ১২৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখনই খাদের কিনারে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া।
১৪০ রানেই অস্ট্রেলিয়ার ৮ম উইকেটের পতন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে যেন উইকেটের বাইরে টেনে আনেন সাকিব আল হাসান। বলের টার্ন আর বাউন্সে খেই রাখতে পারেননি অসি অলরাউন্ডার। অমন ষ্টাম্পিং মিস করেননি মুশফিকও। ১৪০ রানেই অস্ট্রেলিয়ার ৮ম উইকেটের পতন। সাকিব আল হাসান তুললেন তিন নম্বর উইকেট।
তবে এরপরই নবম উইকেট বেশ ভোগাতে শুরু করেন অ্যাস্টন অ্যাগার ও পুয়াট কামিন্স। দুজনে মিলে গড়েন ৫৩ রানের জুটি। নবম উইকেট জুটিতেই যেন বাংলাদেশের বিপক্ষে হয়ে যায় যতো প্রতিরোধ। শেষবার ইংল্যান্ড সিরিজেও ক্রিস ওকস আর আদিল রশিদ মিলে তুলে ফেলেছিলেন ৯১ রান। অ্যাগার-কামিন্সকে জুটিতে ৫৩ রানের বেশি করতে দেননি সাকিব। কামিন্স বোল্ড করে ভেঙেছেন প্রতিরোধ, তুলেছেন নিজের চার নম্বর উইকেট। আউট হবার আগে ৯০ বলে ২৫ রান করে অসি পেসার। শেষ উইকেটটাও মুড়ে দেন সাকিব। আউট করেন হ্যাজেলউডকে। হয়ে যায় তার সব টেস্ট দলের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।