ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্য কাঠামোতে বারবার অনুপ্রবেশ করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রয়েছে বিলে। আইনে যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার তথ্য-উপাত্ত, ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা বা করতে সহায়তা করাকে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ জন্য ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে সোমবার বিলটি উত্থাপন করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এরপরই বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। পরে ওই ধারা পরিবর্তন হয়ে এই বিলে হয়েছে ৩২ ধারা। আমরা কখনই ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে গিয়ে মৌলিক অধিকার হারাতে চাই না। এ বিলে এমন কিছু ধারা রয়েছে যা সংবিধানের পরিপন্থী। পরে কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের আপত্তি বাতিল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিলটি সংসদে উত্থাপন করছি মাত্র। এটা স্থায়ী কমিটিতে যাবে। সেখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষা আর সংযোজন-বিয়োজন হবে।
পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়।
উত্থাপিত বিলে ৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, প্রতারণার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করে সুবিধা লাভের চেষ্টা করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রপাগান্ডা চালান বা তাতে মদদ দেন তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার অপরাধ বা সাইবার সন্ত্রাসের অপরাধ সংঘটনের দায়েও ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান ২৭ ধারায় রাখা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রেও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান যুক্ত হয়েছে। ৩৪ ধারায় বর্ণিত হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধেও একই দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে সাত বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্যকোনো ইল্ট্রেনিক ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা ভীতি প্রদর্শনমূলক তথ্য সম্প্রচার করেন তাহলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয়বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করেন তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবেন।
মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান ২৯ ধারায় রাখা হয়েছে।
না জানিয়ে কেউ যদি কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করেন, তাহলে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান ৩০ ধারায় রাখা হয়েছে।
৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার কোনো ধরনের অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্যউপাত্ত, কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে। এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।