এতদিন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূল শক্তি ছিল স্পিন। সেই ধারা ভেঙে এবার পেসাররা গড়লেন এক অনন্য কীর্তি। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের ১০ উইকেটের সবকটি নিলেন বাংলাদেশের তিন পেসার হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও তাসকিন আহমেদ। সোমবার চতুর্থদিনে গতি, দারুণ লাইন-লেন্থ ও সুইং দিয়ে তিন পেসার পাকিস্তানের ব্যাটারদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের পেসারদের টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা। এর আগে চার ইনিংসে নয়টি করে উইকেট নেওয়ার নজির ছিল। প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি পেসার হিসাবে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। এবারের সফরে মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাসের পর রাওয়ালপিন্ডির অনার্স বোর্ডে নাম লেখালেন ডান-হাতি এই পেসার। তার পাঁচ উইকেটের সঙ্গে নাহিদ রানা চারটি ও তাসকিন একটি উইকেট নেন।
দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের জন্য বাংলাদেশের আজ শেষদিনে প্রয়োজন আরও ১৪৩ রান। প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে স্বাগতিকরা ২৭৪ রানে অলআউট হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে বাজিমাত করেন পেসাররা। এবার পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ১৭২ রানে।
আগেরদিন ব্যাট হাতে ৫১ বলে ১৩* করেছিলেন হাসান। লিটন সেঞ্চুরি করেন। রোববার শেষ বিকালে হাসান দুটি উইকেট নেন। কাল সকালে শুরুটা করেন তাসকিন। নাহিদ এসে চমক দেখান। তার গতিতে পরাস্ত হন শান মাসুদ। পরের ওভারে আরও ভয়ংকর নাহিদ। বাবর আজমকে আউট করার পর মোহাম্মদ রিজওয়ানকেও স্লিপে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন। প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো সাদমান ক্যাচ মিস করলে ‘জীবন’ পান এই সিরিজে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটার রিজওয়ান। পরের ওভারে নাহিদ সাউদ শাকিলকে ফেরালে ছয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ‘জীবন’ পাওয়া রিজওয়ান ও সালমান আগা যখন জুটির হাফ সেঞ্চুরি করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আবার আঘাত হানেন হাসান। রিজওয়ানকে ফিরিয়ে ৫৫ রানের সপ্তম উইকেট ভাঙার পর শূন্যতে ফেরান মোহাম্মদ আলীকে। আবরার আহমেদকে নাহিদ ফেরালে দুজনের নামের পাশে চারটি করে উইকেট হয়ে যায়। তখন নাহিদ ও হাসানের লড়াইটা ছিল প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেওয়ার। মির হামজাকে ফিরিয়ে সেই লড়াইয়ের ইতি টেনে দলের মুখে হাসি ফোটান হাসান। পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম পেসার তিনি। এজন্য ১০.৪ ওভারে তার খরচ মাত্র ৪৩ রান। হাসানের চেয়ে কম রানে পাঁচ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশি পেসার শুধু শাহাদাত হোসেন। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭ রানে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তান সিরিজ দিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের নতুন যুগের সূচনা হলো। ওয়ানডেতে দুবার পেসাররা ১০ উইকেট নিলেও টেস্টে এটাই প্রথম। টেস্টে প্রতিপক্ষের অলআউট হওয়া ইনিংসে পেসারদের ১০ উইকেট নেওয়ার ঘটনা দেখা গেছে ৮৫৯ বার। ওয়ানডেতে ১৫৮ বার এবং টি ২০তে ২৪ বার।
স্কোর কার্ড
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ২৭৪।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ২৬২।
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস ১৭২ (সাইম আইয়ুব ২০, শান মাসুদ ২৮, বাবর আজম ১১, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৪৩, সালমান আগা ৪৭*। হাসান মাহমুদ ৫/৪৩, নাহিদ রানা ৪/৪৪)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস
রান বল ৪ ৬
জাকির হাসান ব্যাটিং ৩১ ২৩ ২ ২
সাদমান ইসলাম ব্যাটিং ৯ ১৯ ০ ০
অতিরিক্ত ২
মোট (বিনা উইকেটে, ৭ ওভারে) ৪২
বোলিং : মির হামজা ৩-১-১২-০, খুররাম শাহজাদ ৩-০-২৩-০, আবরার আহমেদ ১-০-৫-০।