ব্রাদার্স ইউনিয়নের পেসার মোহর শেখের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে মোহামেডানের সৌম্য সরকার মাত্র ৯ রানে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সৌম্যর আসা-যাওয়ার এমন দৃশ্য নিয়মিত ঘটনা। চরম অফফর্মে থাকা সৌম্য বিপিএলের পর ঢাকা লিগেও নিজের ছায়া হয়ে আছেন।
প্রবল সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতী নিয়ে জাতীয় দলে আসেন সৌম্য সরকার। নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে নিজের অবস্থানও শক্ত করেন। কিন্তু ধারাবাহিকতার এতোটাই অভাব যে কালেভাদ্রে হাসত তার ব্যাট। সেই সৌম্য এখন যেন রূপকথা। ক্রিজে টিকে থাকতে যাকে এখন করতে হয় লড়াই, থিতু হলেও খেলতে পারেন না চাহিদানুযায়ী।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ঢাকা লিগে মঙ্গলবার মোহামেডানের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশার। সৌম্যর ব্যাটে রানখরা নিয়ে ম্যাচকালীন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বাশার। তার কণ্ঠে বিরক্ত, আক্ষেপের সুর পাওয়া গেল।
‘সৌম্যর কাছে যে প্রত্যাশা সে অনুযায়ী পাচ্ছি না। কিছু দিন আগেও জাতীয় দলে ছিল। বাংলাদেশের পক্ষে তার অনেক ভালো পারফরম্যান্স আছে। ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। এখন প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স পাচ্ছি না। ও এখনও আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলে আমাদের পুল আরও বড় হয়। আমরা বিশ্বাস করি, ওর সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটু হতাশ তো অবশ্যই।’
ঢাকা লিগে এখন পর্যন্ত ৯ রাউন্ডে সৌম্যর ব্যাট থেকে এসেছে কেবল ১৬১ রান। সর্বোচ্চ ৫৬। আরেক ম্যাচে করেন ৪১ রান। বাকি সব ম্যাচে আউট হয়েছেন বিশের আগেই। এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) চার ম্যাচে করেন মাত্র ১৩৮ রান। মাঝে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের প্রস্তুতি ম্যাচে সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান। বিপিএলেও হাসেনি তার ব্যাট। ১২ ম্যাচ খেলে করেন কেবল ১৭৪ রান।
সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছিলেন সৌম্য। অস্ট্রেলিয়ায় সেই বিশ্বকাপে চার ম্যাচে মাত্র ৪৯ রান করে দল থেকে বাদ পড়েন। গতবছর ৬টি টি-টোয়েন্টিতে তার বিবর্ণ সময় চলছিল। এ সময়ে রান করেছিলেন মাত্র ৭৬। এর আগের বছর ১৬ টি-টোয়েন্টি খেলা সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ১৫.৬৮ গড়ে ২৫১ রান।
নিয়মিত খেলার মধ্যেই আছেন। পারফর্ম না করেও সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। তবে সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। পোক্ত করতে পারেননি নিজের জায়গা। সৌম্যর এই সমস্যা থেকে তার নিজেরই কাটিয়ে উঠতে হবে বলে জানিয়েছে হাবিবুল বাশার, ‘ওর সাথে সবাই কথা বলছে। যে মানসিক সমর্থন দরকার সেটা সবসময় দেওয়া হয়। মাঝেমাঝে ক্রিকেটারদের নিজেকেই নিজে বাঁচাতে হয়। ও কিন্তু অনেক দিন ধরে খেলছে, মোটেও নতুন ক্রিকেটার না। যথেষ্ট অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। মানসিক সমর্থন তো সবসময় পায়। নিজেকেই ঠিক করতে হবে, কীভাবে খেলতে হবে সেটা নিজেকেই বের করতে হবে।’
‘সব ব্যাটসম্যানের একটা ব্যাটিং পরিকল্পনা থাকে, একটা নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে। সেটা হতে পারে কোন বোলারকে মারবে, কোন বোলারকে মারবে না, কোন দিক ছোট, কোন দিকে বাতাস আছে। এমন সব ব্যাটারেরই কিছু বেসিক পরিকল্পনা থাকে। সৌম্যকে নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে, কীভাবে ও ব্যাটিং করতে চায়। নিজের ব্যাটিং বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। ওকে বোঝানোর কিন্তু কিছু নেই। ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সাফল্য আছে। বড় বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস আছে। ওকে কিছু বোঝানোর নেই। ওকে নিজেই বুঝতে হবে।’- যোগ করেন বাশার।