‘শিক্ষায় নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে’
—নুসরাত জাহান, শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ভবিষ্যতের শিক্ষাক্রম কেমন হওয়া উচিত সেটি এখন ভাবনার বিষয়। সবার আগে নজর দেওয়া উচিত দক্ষতা বিকাশে। একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে আলাদা করে স্কিল ডেভেলপ করার জন্য বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হতে বাধ্য হয়। শিক্ষাক্রম এমনভাবে করা উচিত যেখানে ছাত্রাবস্থায় তারা স্কিল ডেভেলপ করতে পারে। পাঠ্যপুস্তকে এমন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যেগুলো বাস্তব জীবনে কাজে লাগে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনার্স চার বছর এবং মাস্টার্স এক বছর। এটি খুব দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। অনার্স মাস্টার্স শেষে শিক্ষার্থীকে চাকরির জন্য আলাদাভাবে পড়তে হয়। এই দীর্ঘমেয়াদী অনার্স মাস্টার্স কমিয়ে আনা উচিত। চাকরির পরীক্ষার সিলেবাস দেখলে মনে হয়, ইতিহাসের খেরোখাতা খোলা হয়েছে। ইতিহাস মুখস্থ করে চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা বোধহয় সময়ের দাবি। আগামীর বিশ্বে তাল মেলাতে প্রয়োজন প্রযুক্তিগত দক্ষতা, শানিত ইংরেজি। পাশাপাশি জোর দিতে হবে গবেষণা কার্যক্রমে।
‘উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি বন্ধ হোক’
—তাসনিয়া হোসেন, শিক্ষার্থী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্দোলন-সংগ্রামে সূতিকাগারের ভূমিকা রাখতে পারলেও পড়াশোনা ও গবেষণায় ভালো করছে না। দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শিক্ষার মান উন্নয়নে নজর দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সকল চাকরিতে মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, কারণ ‘রেফারেন্স’ বিবেচনা করে নিয়োগ দিলে সেখান থেকেই দুর্নীতি শুরু হয়। সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে সরাসরি সেবা দেয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে আমূল পরিবর্তন চাই। ঘণ্টার পর ঘণ্টার ভোগান্তি বা হয়রানিতে আর চাই না; ঘুষ লেনদেনও নির্মূল হোক পুরোপুরি। এছাড়া দেশের বেশিরভাগ বড় উন্নয়ন প্রকল্প রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। এবার বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। যেকোনো প্রকল্পের ব্যয় বাড়াতে বিভিন্ন কারসাজির উদাহরণ আমরা অতীতে দেখেছি, নতুন বাংলাদেশে সেটি চাই না। এই দুর্নীতি চিরতরে বন্ধ হোক।
‘ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কার খুব জরুরি’
—জহিরুল কাইউম ফিরোজ, তরুণ সাংবাদিক
বাংলাদেশে পালা করে জনপ্রিয়তার হাতবদল ঘটেছে ক্রিকেট ও ফুটবলে। তৃতীয় কোনো খেলার অস্ত্বিত্ব আদতে নেই। ক্রিকেট, ফুটবলও অনেকটা নামেই আছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যহীন। ভঙ্গুর কাঠামোকে আবার দাঁড় করাতে সবার আগে প্রয়োজন দর্শকের মনকে সংস্কার ও বিকেন্দ্রীকরণ। কেবল দুই একটি খেলা এবং সেখানকার তারকাদের নিয়ে মাতামাতির দিন শেষ। নজর রাখতে হবে, খবর রাখতে হবে সব খেলার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিক গেমস। এবার বাংলাদেশ থেকে পাঁচজন প্রতিনিধিত্ব করলেও সফলতা আসেনি। অলিম্পিকের একজন পদকজয়ী বড় ভূমিকা রাখে দেশে। এক ছাতার নিচে অনেক খেলা থাকায়, পরিধি ও সম্ভাবনা ব্যাপক। এখানে সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার, দর্শকের বিকেন্দ্রীকরণ, খেলোয়াড়দের জবাবদিহিতায় আনার কাজগুলো করতে হলে সব বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
‘মুক্ত গণমাধ্যম হোক নতুন বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর’
—তাসনিমুল হাসান উদয়, সাবেক শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা অবশ্য কর্তব্য। বর্তমানে মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাকি সব দেশের নীচে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। আমি চাইবো, আগামীর বাংলাদেশে যেন অবশ্যই সংবাদমাধ্যমগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। দীর্ঘ সময় সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকার কারণে দেশের গণমাধ্যমগুলো বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি জনগণের আস্থার আস্থার সংকট তৈরী হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম সংবাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সাধারণ মানুষের পাশে থেকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করার বিকল্প নেই।
‘জলবায়ু খাতকে রাখতে হবে পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে’
—মো. আবু রাহাত, সাবেক সভাপতি, বিইউপি এনভায়রনমেন্ট ক্লাব
পরিবর্তনের এই পদযাত্রায় পরিবেশ ও জলবায়ু খাতকে রাখতে হবে পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দুর্যোগ-ঝুঁকি এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের মাত্রা বিবেচনায়, আমরা খুব সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছি। তড়িৎ পদক্ষেপ, সমন্বিত পরিকল্পনা ও পরিবেশ-দুর্বৃত্তদের অপচেষ্টা রুখে দিয়ে টেকসই পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে এবার। পূর্বগৃহীত নীতিমালা ও সিদ্ধান্তগুলোর সামগ্রিক বিশ্লেষণ ও নিরীক্ষণ পূর্বক সেগুলোর দূর্বলতা ও যৌক্তিকতা যাচাই এবং প্রয়োজনীয় পরিমার্জন আনয়ন করাও একান্ত প্রয়োজন। নবায়নযোগ্য শক্তি, উদ্ভাবনী জলবায়ু সমাধান সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ও সেবা, সবুজ ব্যবসা, ব্যর্জ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সম্মত-টেকসই বিকল্প পণ্য সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি এবং সরকারিভাবে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান পূর্বক বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ এখন অতিশয় জরুরি। দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ, গবেষণা এবং নতুন চাকরির খাত সৃষ্টি করাও তারুণ্যের প্রত্যাশা।
‘দেশে বস্ত্রশিল্প আরও সমৃদ্ধ হোক’
—তামিম হাসান, শিক্ষার্থী, সরকারি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, খুলনা
গত কয়েক দশক ধরে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ ভাগ অর্জিত হচ্ছে বস্ত্র খাত থেকে। পোশাক শিল্প কারখানা ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে যার ৬৫ শতাংশ নারী। এছাড়া পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটির অধিক মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ। বস্ত্র শিল্পে কারিগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ বস্ত্র শিল্পকে সরকারি সহায়তার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদা পূরণ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি ও দেশের সকল বিভাগীয় শহর অঞ্চলে বেকারত্বের হার হ্রাস করতে টেক্সটাইল শিল্প কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। নিরাপদ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শক্তিশালী বস্ত্রখাত গড়ে তুলতে বস্ত্রনীতির মান আরও বৃদ্ধি করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্টি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। টেক্সটাইল পণ্যসামগ্রীর বিদেশে রপ্তানি যেনো ব্যহত না হয় সেই জন্য সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।