এশিয়াড ফুটবলে শুক্রবার মুখোমুখি বাংলাদেশ-উত্তর কোরিয়া

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস গড়েছে এশিয়ান গেমস ফুটবলের শেষ ষোলোতে পা রেখে। এ ইতিহাস হয়েছে গ্রুপের শেষ ম্যাচে কাতারকে ১-০ গোলে হারানোর ফলে। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ৯৮ ধাপ এগিয়ে থাকা কাতারকে হারাতে পারলে উত্তর কোরিয়াকে কেন নয়? দুই দুইবার বিশ্বকাপ খেলা উত্তর কোরিয়া যে এগিয়ে ৮৬ ধাপ! কাতারের চেয়ে ১০ ধাপ কাছে। শুক্রবার শেষ আটে ওঠার লড়াইয়ে নামার আগে এমন সমীকরণও মেলাচ্ছেন অনেকে।

ফুটবলে রোজ রোজ একই জিনিস হয় না। সবদিন মেলে না সমীকরণও। কখনো কখনো র‌্যাংকিংয়ের পার্থক্যটা মাঠে ফুটে উঠে, কখনো গনেশ উল্টে যায়। এই যেমন র‌্যাংকিংয়ে ৯৮ নম্বরে থাকা কাতারকে হারিয়ে দিয়েছে ১৯৪ নম্বরের বাংলাদেশ। যে জয়েই লেখা হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাস। শুক্রবার এমন কিছু হলে তা হবে অবিস্মরণীয় রূপকথা। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়ার ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায়।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের দেখা হলেও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে খেলা হয়েছে খুব কম। ইতিহাস ঘেটেঘুঁটে এবং সাবেক ফুটবলারদের কাছে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ মিলে ৬ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়া। ভরসা পাওয়ার মতো তথ্য- বাংলাদেশের জয়ের অভিজ্ঞতাও আছে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী দেশটির বিরুদ্ধে।

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রেসিডেন্টস গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ লাল দল টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে উত্তর কোরিয়াক হারিয়ে উঠেছিল ফাইনালে। ফাইনালে বাংলাদেশ হেরে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে। ওই মাচে টাইব্রেকারে জয়সূক গোল করা হাসানুজ্জামান খান বাবলু বললেন, ‘ম্যাচটি ১-১ গোলে শেষ হয়েছিল। টাইব্রেকারে আমরা ৫টি গোলই করেছিলাম। ওরা করে ৪টি। শেষ শটটি ছিল আমার।’

১৯৯৮০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কুয়েতে এশিয়ান ন্যাশন্স কাপের ‘বি’ গ্রুপে উত্তর কোরিয়ার মুখোমমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা লড়াই করে হেরেছিল ৩-২ গোলে। বাংলাদেশকে হারাতে উত্তর কোরিয়াকে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানের পেশওয়ারে কায়েদ-ই-আজম ফুটবলের ফাইনালেও। উত্তর কোরিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

এর ৩ বছর পর ১৯৮৮ সালের ১ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার মাটিতে তাদের গোলশূন্য রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটি ছিল ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। যদিও পরের দুটি ফিফা ফ্রেন্ডলিতে বাংলাদেশকে হেসেখেলেই হারিয়েছে উত্তর কোরিয়া; ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে শেষ দুটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচেই বাংলাদেশের হার ছিল ৫-১ গোলে। এরপর আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে মুখোমুখি হয়নি দুই দেশ। দীর্ঘ ২০ বছর পর আবার উত্তর কোরিয়ার সামনে বাংলাদেশ।

প্রত্যাশার কোনো সীমা নেই। তাই তো বাংলাদেশের ফুটবলারদের কাছে আরেকটি ঐতিহাসিক দিনতো চাইতেই পারে দেশের ফুটবলামোদীরা। নতুন ইংলিশ কোচ জেমি ডে’র প্রশিক্ষণে জামাল ভুঁইয়ার বাংলাদেশের ফুটবলের সবচেয়ে সাফল্যটি তুলে এনেছেন এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোতে নাম লিখিয়ে। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের ফল যাই হোক, বাংলাদেশের ফুটবল নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। আরেক ম্যাচ জিতলে শেষ ষোলো থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল- ভাবতে ভালোই লাগে।

ভাবনা আর বাস্তবতা এক নয়। বাংলাদেশ-উত্তর কোরিয়ার ফুটবলের পার্থক্য যোজন-যোজন। সর্বশেষ এশিয়ান গেমসসহ দুইবার ফাইনাল খেলেছে তারা। আরো দুইবার খেলেছে সেমিফাইনালে। ১৯৬৬ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই উত্তর কোরিয়া উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। ২০১০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। ফুটবল ঐতিহ্যে ভরা এমন একটি দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াই।

কাগজ-কলমের শক্তিতে ফেবারিট উত্তর কোরিয়া। কিন্তু বদলে যাওয়া দল বাংলাদেশ এখন যে খেলার আগেই হেরে যায় না! সবচেয়ে বড় কথা- এ ম্যাচে কিছুই হারানোর নেই বাংলাদেশের ; কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক কিছু। দেখা যাক, ঈদের আগে-পরে দুটো উপহার দেশবাসীকে দিতে পারেন কি না জামাল-সুফিলরা!