আগামী জাতীয় সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। দলের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীতেও বেশ কিছু রদবদের সম্ভাবনা রয়েছে। কার্যনির্বাহী সংসদের এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে পুরানো অনেকে নেতাই বাদ পড়তে পারেন, যুক্ত হতে পারেন নতুন নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি ও দক্ষ এবং যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন আসবে ও পুরানোদের জাগায় নতুনরা স্থান পাবেন। দীর্ঘদিন যারা একই পদে আছেন তাদের অনেকেরই পদ পরিবর্তন হবে এবারের সম্মেলনে। এমনকি মন্ত্রিসভায় রয়েছেন এমন অনেককেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
দলীয় সূত্র বরছে, চলতি বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিনবছর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা। গত ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ (কেন্দ্রীয় কমিটি) গঠিত হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী অক্টোবরেই সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি এবং নেতৃত্বকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। এতে বিভিন্ন পদে রদবদল ও পুরনোদের সরিয়ে নতুনদের আনা হবে। দলের সভাপতিমণ্ডলীতে বর্তমানে যারা রয়েছেন সেখান থেকে ৪/৫ জনকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
তাদের সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হবে। এর আগে ২০০৯ সালের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা দেওয়া হয়। ওই বছর সভাপতিমণ্ডলীর ও সম্পাদকমণ্ডলীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ ও নতুন মুখকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে আসা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন পুরনো অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েন। এবারের সম্মেলনেও তেমনটাই আনা হতে পারে।
দলীয় সূত্র আরও জানা যায়, বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে তিনজন টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। গত সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের একটি পদ বাড়িয়ে ৪টি করা হয়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে তিন মেয়াদে দয়িত্বে থাকা তিনজনের আগামী কমিটিতে বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
তবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে বাদ পড়লেও তাদের কেউ কেউ সভাপতিমণ্ডলীতে জায়গা পেতে পারেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে ৮টি।
এই পদগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ৬ জন টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০০৯ সালের সম্মেলনে পুরনো সব সাংগঠনিক সম্পাদকদের বাদ দিয়ে এই ৬ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা হলেন- আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
পুরনো এই ৬ জনের অধিকাংশকেই সংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। তারা কেউ জায়গা পেতে পারেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে।
অপর দুই সাংগঠনিক সম্পাদক চলতি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন- একেএম এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাদের বর্তমান পদেই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়া কারো কারো পদোন্নতি হতে পারে। আবার কেউ কেউ কার্যনির্বাহী সদস্য পদে স্থান পেতে পারেন। এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য পদগুলোতেও পরিবর্তন আসবে। সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকমণ্ডলীর বিভিন্ন পদে নতুন কিছু মুখ নিয়ে আসা হবে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র একাধিক নেতা বলেছেন, এইসব পদে নতুন মুখ হিসেবে ছাত্রলীগ নেতৃত্বসহ গুরুত্বপূর্ণ দাযিত্বে ছিলেন এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন এমন নেতাদের নিয়ে আসা হবে। নতুনদের আগামীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনতে এই পরিবর্তন আনা হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন বঙ্গবন্ধুর ভাগিনা আওয়ামীলীগের র্দূদিনের কান্ডারী আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি। দলীয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন।