বরিশালে লঞ্চে নারীকে ধর্ষণের পর হত্যাকারীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের কেবিনে জান্নাতুল ফেরদৌস লাবনীকে ধর্ষণের হত্যা পর শ্বাসরোধ করে হত্যাকান্ডের আসামী মো. মনিরুজ্জামান চৌধুরী (৩৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তাকৃত মনিরুজ্জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে লাবনীর ব্যবহৃত ওড়না, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুর পল্লবী এলাকা থেকে থেকে তাকে বরিশাল জেলা পিবিআই এর সমস্যরা ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পিবিআই সদস্যদের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল নগরের রূপাতলীস্থ উকিলবাড়ি সড়কের পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির।

সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তারকৃত মনিরুজ্জামানকে বিকেলে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক মো. আনিছুর রহমানের কাছে লাবনী হত্যায় দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। জবানবন্দি প্রদান শেষে তাকে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মনিরুজ্জামান চৌধুরী গাজীপুরের কাবাসিয়া এলাকার আব্দুস শহীদের ছেলে। সে ঢাকার মীরপুর-১ এর দারুস সালাম প্রিন্সিপাল আবুল কালাম রোডের সরকারি কোয়াটার এলাকায় বসবাস করতেন।

পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা থেকে বরিশাল নদী বন্দরে আসা পারাবত ১১ লঞ্চের ৩৯১ নম্বর সিঙ্গেল কেবিন থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লঞ্চের কেবিনবয় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে ওই কেবিনে গিয়ে দরজা খোলা অবস্থায় অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহ খাটের ওপর পরে থাকতে দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক নৌ পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। সুরতহাল ও অন্যান্য আলামতের ভিত্তিতে বিষয়টি হত্যাকান্ড বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার পরে তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মনিরুজ্জামান জানায়, লাবনীর সাথে তার গোপনে বিয়ে হয়েছে। তারা লঞ্চযোগে বরিশাল বেড়াতে এসেছিলেন। রবিবার দিবাগত রাতে লঞ্চের কেবিনে উভয়ের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায় গলায় ওড়না পেচিয়ে লাবীনকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে সে। সোমবার ভোরে লঞ্চটি বরিশাল নদী বন্দরে নোঙ্গর করার পর বাসযোগে ঢাকায় চলে যায় মনিরুজ্জামান।

পিবিআই তদন্তের প্রথমভাগেই অজ্ঞাত ওই নারীর পরিচয় জানতে পারে। জান্নাতুল ফেরদৌস লাবনী নামে ওই নারীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার আদমপুর এলাকায়। যদিও সে ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে বসবাস করতেন।

পুলিশ জানায়, লঞ্চের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সনাক্ত করা ওই নারীর সঙ্গে লঞ্চে আগমন করা ব্যক্তির সন্ধানে নামে পিবিআই। এক পর্যায়ে সনাক্ত হওয়া ব্যক্তিকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে লঞ্চের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ছবি মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী জানায়, তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। লঞ্চযোগে রাতে বরিশাল যাবার পথে কেবিনে তাদের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ওড়না দিয়ে পেচিয়ে লবনীকে হত্যা করা করেছে মনিরুজ্জামান। লঞ্চটি বরিশালে পৌঁছলে মনিরুজ্জামান কৌশলে পালিয়ে বাসযোগে ঢাকা চলে যায়।

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত মরিরুজ্জামান রাইড শেয়ারের চালক ছিল। এটি তার তৃতীয় বিবাহ। আর নিহত লাবনীরও আগে বিবাহ ছিল। তবে বিবাহ না কি পরকিয়া তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে আরো সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বরিশাল সদর নৌ থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনায় নৌ পুলিশ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। গ্রেপ্তারকৃত মনিরুজ্জামানকে তাদের হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডের আবেদনও করা হতে পারে বলে জানান তিনি।