বরিশালে দেড় হাজার অনাত শিশুর ব্যতিক্রমী ঈদ আনন্দ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

বরিশাল সমাজসেবার তত্ত্বাবধায়নে থাকা প্রায় দেড় হাজার শিশুর এবার ব্যতিক্রমী ঈদ আনন্দ দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সাথে পরিবার থেকে বিতাড়িত ২৪ নারীও ঈদ আন্দের ভিন্নমাত্রা পেতে যাচ্ছেন। সমাজসেবা অধিপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসন এই উদ্যোগ নিয়েছে। পরিপূর্ণ ইদ আনন্দ ভোগ করতে শিশুদেরকে আগেভাগেই নতুন পোষাক বিতরণসহ ধাপে ধাপে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঈদের সকালে নামজ পরবর্তী উন্নতমানের খাওয়া-দাওয়া ব্যবস্থাসহ বিনোদনের সুযোগ থাকছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে গত বছর থেকে অনাত শিশুদের জন্য ঈদ উৎসবে ভিন্নমাত্রা দিতে সমাজসেবা অধিদপ্তার ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। এই বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলায় চারটি ও ৫ জেলায় ৫টি শিশু পরিবাসহ পুর্নবাস কেন্দ্রে প্রায় ১৪ শিশুর ঈদ আনন্দ অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।

আর এ ধারাবাহিকতায় বরিশালের আগৈলঝাড়ার ছোটমনি নিবাসসহ চারটি পুর্নবাস কেন্দ্রে নারী শিশু বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এবার এগিয়ে এসেছে বরিশাল জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান ও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম রমজান মাসের মাসের শুরু থেকেই এ পুর্নবাসন কেন্দ্রে সময় দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় শিশুদের ইচ্ছা অনুয়ায়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইফতারও করানো হয়েছে। অবশ্য পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামও কম আন্তরিক নন। তিনিও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুদের ইফতার সামগ্রী দিয়েছেন। এদিকে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) পক্ষ থেকে শিশুদের ঈদবস্ত্র দেওয়া হয়েছে।

ফলে বরিশালের চারটি পুর্নবাসন কেন্দ্রের দিকে ফিরে তাকালে বোঝা যায় সেখানে ঈদ উৎসবের সাজ সাজ রব বসেছে। সেই সাথে রয়েছে ঈদের তিনদিন উন্নতমানের রকমারী খাবারের অয়োজেনও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- বরিশাল বিভাগের ৯টি শিশু পরিবারের পাঁচটিতে মেয়ে ও চারটিতে ছেলেরা বসবাস করছে। সবমিলিয়ে এখানে এক হাজার ৫০টি আসনের বিপরীতে বর্তমানে ৮৮১ জন এতিম শিশু-কিশোর রয়েছে। এছাড়া ১০ শতাংশ কোঠার ভিত্তিতে বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুরের শিশু পরিবারগুলোতে ২৪ জন বৃদ্ধা রয়েছেন। একইভাবে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একশ আসনের বিভাগীয় ছোটমনি নিবাসে রয়েছে পিতৃ ও মাতৃ পরিচয়হীন ২২ শিশু। এছাড়া ৫০ আসনের বরিশাল বিভাগীয় সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রায় ২১টি মেয়ে রয়েছে। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিতে থাকা বিপন্ন শিশুদের জন্য বরিশাল ও বরগুনা জেলায় অবস্থিত চারটি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৩৫৮ জন শিশু-কিশোর রয়েছে। অন্যদিকে বিভাগের একমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ১১০টি আসনে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী ৬৩ জন শিশু রয়েছে। সব মিলিয়ে বিভাগে আঞ্চলিক সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় বিভিন্ন নিবাসে প্রায় এক হাজার ৪ শত শিশু-কিশোর থাকছে।

বরিশাল জেলা প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ জানিয়েছেন- শিশু-কিশোরদের ঈদ আনন্দ রঙিন করতে সমাজসেবার অধীনে থাকা পুর্নবাসন কেন্দ্রগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সাজানো হয়েছে ভিন্নরুপে। এছাড়া বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার প্রায় প্রতিদিনই ছোটমনি নিবাসে শিশুদের তদারকিতে উপস্থিত হলে ভিন্ন এক আনন্দধারা পায়। বিষয়টি এখন বরিশালে বেশ আলোচনায় এসেছে। ইতিপূর্বে কখনওই শিশু পুর্নবাসন কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঈদ উৎসব পালনের উদ্যোগ ছিল না। গত বছর থেকে অনাত শিশুদের ঈদ উদযাপনকে পূর্ণতা দিতে সমাজসেবার প্রসংশীয় একটি উদ্যোগ বিভিন্ন মহলকে আকৃষ্ট করে। তারই আলোকে এবার বরিশাল সিটি মেয়র, র‌্যাব, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার শিশুদের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। শুধু বরিশাল জেলা নয়, গোটা বিভাগের পুর্নবাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সমান ঈদ উৎসব পালনে বিভাগীয় শহর থেকে তদারকি করা হচ্ছ বলে জানা গেছে।

এই ঈদ উৎসব ও আনন্দ এমন প্রশ্নে অনাত শিশুদের মাঝে এখনই আনন্দ ধারা বয়ে যায়। যেন নিজ বাড়িতেই তাদের এই উৎসব রঙিন করতে শিশুরাও পিছিয়ে নেই। তারা প্রস্তুত এবারের ঈদেও খুশির পূর্ণতা লাভে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক শাহ পারভীন জানান- ঈদ উৎসব উপলক্ষে তাদের পক্ষ থেকে শিশু কিশোর ও বৃদ্ধদের নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই উৎসবকে ঘিরে সব ধরনের আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে। এছাড়া পুরো রমজান মাসজুড়ে শিশু পরিবারসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইফতার আয়োজন ও ঈদের পোশাক দেওয়া অব্যবাহত রয়েছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন- গৃহ ও পিতৃমাতাহীন শিশু কিশোরদের ঈদানন্দ দিতে তাদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।’