বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ঈদে আসছে বিলাসবহুল কুয়াকাটা-২

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

বাইরে থেকে দেখে মনে হয় বিলাসবহুল বাড়ি। কাছে গেলে বোঝা যায় চার তারকা হোটেল। ভেতরে ঢুকলে মনে হয় রাজকীয় প্রাসাদ। এবার ঠিক এমন একটি লঞ্চ নামানো হচ্ছে নদীতে। লঞ্চটির ভেতরে ঢুকলে চোখ ধাঁধানো কাঠের কারুকাজ, নান্দনিক ডিজাইন ও আধুনিক সাজসজ্জা দেখলে মাথা ঘুরে যাবে। লঞ্চটি যেন নদীতে ভাসমান বিলাসবহুল চার তারকা হোটেল। প্রযুক্তিনির্ভর লঞ্চটিতে থাকছে চার তারকা হোটেলের যাবতীয় ব্যবস্থা। অসাধারণ নির্মাণশৈলীর সুনিপুণ প্রদর্শনীর কারণে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটি লঞ্চ নাকি চার তারকা হোটেল।

যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে লঞ্চটিতে রয়েছে বিনোদন স্পেস, বড় পর্দার টিভি, দেশ-বিদেশের চ্যানেল দেখতে ডিশ, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা, রেস্টুরেন্ট, উন্মুক্ত ওয়াইফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। লঞ্চটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো চারতলায় ওঠার দুটি সিঁড়ি। সিঁড়ির ধাপগুলোর ভেতরের দিকে যুক্ত করা হয়েছে এলইডি টিভি। লঞ্চটির আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া আধুনিক ঝাড়বাতিসহ বিভিন্ন ধরনের এলইডি লাইট। লঞ্চের সৌন্দর্য দেখে যে কেউ বিস্মিত হবেন। কারণ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সব কিছুই রয়েছে লঞ্চটিতে। বরিশাল-ঢাকা নদীপথে যাত্রীদের যাত্রা আরও আরামদায়ক করতে বিলাসবহুল এই লঞ্চটি নির্মাণ করেছে দেশের অন্যতম নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশন। লঞ্চটির নাম রাখা হয়েছে এমভি কুয়াকাটা-২।

সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের আগেই যাত্রী পরিবহন করবে কুয়াকাটা-২ লঞ্চ। লঞ্চটি উদ্বোধনের জন্য পরীক্ষা করে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশনের লঞ্চের সংখ্যা দাঁড়ালো চারটিতে। কুয়াকাটা-১ নামে এ কোম্পানির আরেকটি লঞ্চ পটুয়াখালী-ঢাকা নদীপথে চলাচল করছে। রেডসান-২ লঞ্চটি ঢাকা-শরীয়তপুর এবং রেডসান-৫ লঞ্চটি ঢাকা-তুষখালী রুটে চলাচল করছে। তবে এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চটি ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশনের সবচেয়ে আধুনিক লঞ্চ। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ধলেশ্বর এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চটি তৈরি করা হয়েছে।

এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চটির নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. পলাশ বলেন, বিশেষজ্ঞ নৌ স্থপতির নকশায় সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের নির্মাণকাজ চলেছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন দক্ষ শ্রমিকের পরিশ্রমে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এর। ২৭০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যরে লঞ্চটির প্রস্থ ৪৪ ফুট। বড় জাহাজের আদলে তৈরি লঞ্চটি দেড় হাজারের বেশি যাত্রী ধারণ করতে পারবে। চারতলা লঞ্চটিতে পাঁচ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধা রয়েছে। এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের আধুনিক সুবিধা দেখলে মনে হবে চার তারকা হোটেল। কুয়াকাটা-২ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. পলাশ বলেন, লঞ্চে দেড় শতাধিক কেবিন রয়েছে। এতে মোট তিন ধরনের কেবিন আছে। বিলাসী যাত্রীদের জন্য থাকছে চারটি ভিআইপি ও তিনটি সেমি-ভিআইপি কেবিন। রয়েছে তিনটি ফ্যামিলি কেবিন। এছাড়া লঞ্চটিতে রয়েছে ৫৮টি ডাবল ও ৮৬টি সিঙ্গেল কেবিন। লঞ্চের প্রতিটি কেবিন দৃষ্টিনন্দন ব্যয়বহুল আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে, যা যাত্রীদের লঞ্চযাত্রায় বাড়তি আনন্দ দেবে।

ডলার ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আবুল কালাম খান বলেন, কুয়াকাটা-২ লঞ্চটি তৈরির সময় যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাহাজ নির্মাণের অন্যতম কাঁচামাল ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। জাপানের তৈরি ১ হাজার ৯২০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিনের কারণে লঞ্চটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে লঞ্চডুবির আশঙ্কা নেই। আবুল কালাম খান বলেন, লঞ্চে নামাজ আদায়ের স্থান ছাড়াও একতলা ও তিনতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তিনতলার রেস্টুরেন্টটি আধুনিক আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। ভ্রমণে ক্লান্তি দূর করতে বিলাসী যাত্রীদের জন্য ভিআইপি কেবিনগুলো বানানো হয়েছে বিলাসবহুল আবাসিক চার তারকা হোটেলের আদলে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো প্রতিটি কক্ষ। সৌন্দর্য বাড়াতে লঞ্চের করিডরসহ বিভিন্ন স্থানে দামি ওয়াল পেইন্টিং ঝুলানো হয়েছে। ভিআইপি প্রতিটি কেবিনের সঙ্গে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। এখানে বসে নদী, পানি, আকাশ আর আশপাশের মনোরম প্রকৃতি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।

আবুল কালাম খান আরও বলেন, ইতোমধ্যে লঞ্চটি পানিতে ভাসানো হয়েছে। ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় নদীতে চালিয়ে ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনো ত্রুটি ছাড়াই সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে লঞ্চটি। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের আগেই অর্থাৎ ২৬ রোজায় উদ্বোধন করা হবে। আমাদের বিশ্বাস যাত্রীদের চমকে দেব। তবে লঞ্চটি বিলাসবহুল হলেও ভাড়ায় পরিবর্তন হবে না। সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকবে। মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি যাত্রীসেবা প্রদান হবে কুয়াকাটা-২ লঞ্চের মূল লক্ষ্য।