আপোসে সুযোগ পেয়ে রাজশাহীর জন্য যে পরিকল্পনা নাফীসের

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি সব সময়ই ভাল ব্যাটসম্যান হিসেবে সমাদৃত। পরিপাটি টেকনিক, টেম্পারামেন্ট ও স্টাইল- সব মিলে শাহরিয়ার নাফীস মানেই একজন ‘কোয়ালিটি ব্যাটসম্যানে’র প্রতিচ্ছবি। জাতীয় দলের হয়েও রেকর্ড বেশ ভালো। ২৪ টেস্টে ১২৬৭ রান, এক সেঞ্চুরি ও সাত হাফ সেঞ্চুরিসহ ৭৫ ওয়ানডেতে চার সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ২২০১ রান।

এক সময় জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্যও ছিলেন। ওপেনার হিসেবে এক সময় তিনিই ছিলেন প্রথম পছন্দ। টেস্ট আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই তার ব্যাট থেকে রান আসতো নিয়মিত। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জাতীয় দলকে প্রথমবার নেতৃত্বও দিয়েছেন। সবকিছু ঠিকমত চললে, মানে নিজেকে ধরে রাখতে পারলে হয়ত এখনো তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী হতে পারতেন শাহরিয়ার নাফীস; কিন্তু ফর্ম ধরতে না পারায় সেই যে বাদ পড়েছিলেন, এরপর ওপেনিংয়ে এক ঝাঁক পারফরমার এসে পড়ায় আর দলে ফেরা হয়নি তার।

জাতীয় দলে ফিরতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে, বিশেষ করে জাতীয় লীগ আর বিসিএল মানে- দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে এ বাঁ-হাতি টপ অর্ডারের ব্যাট এখনো সচল। ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর বিপিএলে শুরুর দিকে বেশ ভাল খেলেছেন শাহরিয়ার নাফীস। বিপিএলের সফল পারফরমারদের তালিকায়ও আছে তার নাম।

এখন পর্যন্ত বিপিএলে যে তিনজন মাত্র বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন, শাহরিয়ার নাফীস তাদের একজন; কিন্তু এবার সেই সফল উইলোবাজ বিপিএলে দলই পাননি। প্লেয়ার্স ড্রাফটে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকলেও কোন ফ্রাঞ্চাইজি দলে নেয়নি তাকে। শাহরিয়ার নাফীস অবিক্রিতই থেকে যান।

তার মানের একজন অভিজ্ঞ, পরিণত ও সফল ব্যাটসম্যানের দল না পাওয়া রীতিমত বিস্ময়ের জন্মও দিয়েছিল। তবে তিনি নিজে বিপিএলে দল না পাওয়ায় তেমন হা-পিত্যেশ করেননি। বরং বলেছেন, আমি ঘরোয়া ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই ভাল পারফর্ম করার চেষ্টায় থাকি। তবে বিপিএলে দলভুক্তির বিষয়টি যেহেতু ক্রিকেটারদের ওপরে নয়, সেটা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হাতে। তাই এ নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।’

একই সঙ্গে বলেছিলেন, ‘কোন দল যদি আগ্রহ দেখায়, তাহলে আমি বিপিএল খেলবো।’ শেষ খবর, বিপিএলে অবশেষে দল পেয়েছেন শাহরিয়ার নাফীস। পারষ্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তাকে দলে টেনেছে রাজশাহী কিংস। আজ (মঙ্গলবার) রাজশাহী কিংসের প্রথম অনুশীলনে দেখা মিললো শাহরিয়ার নাফীসের। সাংবাদিকদের সাথে কথাও বলেছেন তিনি।

কথোপকোথনের শুরুতেও বিপিএল প্লেয়ার্স ড্রাফটে তাকে না নেয়ার কথা উঠলো। শাহরিয়ার নাফীস রাজশাহী কিংস ফ্র্যাঞ্চাইজি ও টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। বলে উঠলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, দল পাওয়া বা না পাওয়ার ব্যাপারটি সবসময় তো ক্রিকেটারদের হাতে থাকে না। তবে আমি চেষ্টা করি, ব্যক্তিগতভাবে যখনই যে দলের হয়ে খেলি তখনই সেরাটা দেয়ার। আমি রাজশাহী কিংস কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ যে, আমাকে তারা বিবেচনা করেছেন এবং ড্রাফটের পরে আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করবো আমার যে সামর্থ্য এবং অভিজ্ঞতা আছে তা দিয়ে সার্বিকভাবে খেলা এবং যতটুকু সম্ভব অবদান রাখা।’

দলে যেহেতু জায়গা মিলেছে, হয়ত খেলার সুযোগ আসবে। খেলতে পারলে কি করতে চান শাহরিয়ার নাফীস? এবারের বিপিএলে তার কোন ব্যক্তিগত লক্ষ্য আছে কি না? এমন প্রশ্নও উঠলো।

জবাবে অনেক কথার ভীড়ে শাহরিয়ার নাফীস জানিয়ে দিলেন, আসলে ব্যক্তিগত লক্ষ্য পুরণের চেয়ে দলকে সার্ভিস দেয়াই হবে তার মূল লক্ষ্য। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে পারা এবং সময়ের দাবি মেটানোর চেষ্টাই থাকবে তার। সে কারণেই মুখে এমন কথা, ‘ব্যক্তিগত লক্ষ্য বলতে যে পজিশন কিংবা পরিস্থিতিতে খেলি না কেন সেই পরিস্থিতি থেকে দলের স্কোরবোর্ডে জয়ের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু করে দেখানো। কখনো ৩০ বলে ৪০ রান প্রয়োজন হতে পারে, আবার কোনো সময় ৩০ বলে ৭০ রানও দরকার পড়তে পারে, মোটকথা যখন যা দরকার সেই অনুযায়ীই খেলার চেষ্টা করবো।’

বিপিএলে ভালো খেলতে পারলে আবার জাতীয় দলে ফেরা যাবে- এমন স্বপ্ন দেখেন কি না? এমন প্রশ্নর জবাবে শাহরিয়ার নাফীস জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বিপিএলের মাধ্যমে জাতীয় দলে ফেরার চিন্তা করেন না। তার মাথায় একটাই চিন্তা, ভাল পারফর্ম করা। তাই জাতীয় দলে ফেরার চেয়ে সুযোগ পেলে সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেয়া এবং দলের প্রয়োজন মেটানোর চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বেশি।’

তাই মুখে এমন কথা, ‘বিপিএলের মাধ্যমে জাতীয় দলে খেলা- এ ধরণের পরিকল্পনা বা লক্ষ্য আমার মধ্যে নেই। তবে চেষ্টা করবো, সবসময় ভালো পারফর্ম্যান্স করতে। আমি একটা জিনিস সবসময় ফলো করার বা মেনে চলার চেষ্টা করি, সেটা হলো আমি যে দলের পক্ষে খেলি সেই দলের পক্ষেই খেলার চেষ্টা করি। অন্য কোনও চিন্তা নেই। কারণ একজন ক্রিকেটার সিলেকশনের প্রথম শর্তই হলো তার পারফর্মেন্স। আমি যদি নিয়মিত পারফর্ম করি এবং ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশ দলের প্রয়োজন হয় কিংবা আমার সার্ভিসের প্রয়োজন হয়- আর সে ক্ষেত্রে আমি যেন প্রস্তুত থাকতে পারি সেটাই চেষ্টা থাকবে।’

নতুন বছরের লক্ষ্যটাও নতুন- ‘চেষ্টা থাকবে যখন যে ফরম্যাটে যে দলে খেলি, প্রতিটি দলের জন্য সেরা পারফর্মার হওয়া এবং সর্বোপরি বিপিএলে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মারদের মধ্যে থাকা। ’

ব্যক্তিগত কথোপকোথনের বাইরে তার দল রাজশাহী কিংস নিয়েও অনেক কথা বলেছেন শাহরিয়ার নাফীস। শক্তি ও সামর্থ্যের বিচারে রাজশাহী কোন অবস্থানে?

নাফীসের জবাব, ‘আমি মনে করি রাজশাহী কিংস অনেক ব্যালান্সড একটি দল এবং তারা যে কোনো দিন যে কোনো দলকে হারানোর সক্ষমতা রাখে। আপনি যদি সবগুলো দলের সাথে তুলনা করেন, আমি বলবো আমরা স্থানীয় ক্রিকেটারের দিক থেকে সবথেকে ব্যালেন্স সাইড। পাশাপাশি যারা বিদেশি ক্রিকেটার আসছে, তারা সকলেই টি-টোয়েন্টির জন্য অনেক কার্যকরী। আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে প্রতিটি দলের প্রথম লক্ষ্য থাকে, কোয়ালিফাই রাউন্ড পর্যন্ত যাওয়া এবং এরপর পরবর্তী পরিকল্পনা করা। আমাদের সেই চেষ্টাই থাকবে যে দলগতভাবে ভালো পারফর্ম্যান্সের মাধ্যমে কোয়ালিফাই পর্যন্ত যাওয়া। এরপরেরটা পরেই দেখবো ইনশাল্লাহ।’