বরিশালে জমে উঠছে পেয়ারার ভাসমান বাজার

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ঝালকাঠি সদর থেকে উত্তর দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম ভিমরুলী। বাংলার আপেলখ্যাত সুমিষ্ট পেয়ারা উৎপাদন ও ভাসমান বাজারের জন্য এ গ্রামটির পরিচিতি রয়েছে দেশজুড়ে। পেয়ারা, আমড়া ও লেবুসহ বিভিন্ন ফল ও সবজি উৎপাদিত হয় এ গ্রামে।

এ ছাড়া কৃত্তিপাশা, হিমানন্দকাঠি, বিনয়কাঠি, শতদাসকাঠি ও কাপড়কাঠিসহ আশপাশের আরও অন্তত ১৬টি গ্রামের একই চিত্র। তবে বর্ষা থেকে শরতের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার বাজারের কারণে পুরো এলাকার চিত্রটাই বদলে যায়।

গ্রামগুলোতে বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলেও খালগুলোই যেন গ্রামের প্রাণ। পেয়ারা বাগানে যাওয়া, ফল সংগ্রহ করা ও বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাওয়া সবই হয় খালে ছোট ডিঙ্গি নৌকা বেয়ে। গ্রামগুলোর মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা ছোট ছোট খালগুলো বর্ষার পানিতে ফুলে ওঠে। এসব খাল গিয়ে মিশেছে ভিমরুলী খালে। সারা বছরই ভাসমান এ বাজার বসলেও বর্ষায় যেন প্রাণ ফিরে পায় এ জলবাজার। এ সময় ভিমরুলী খালের মোহনায় দেখা মিলবে অসংখ্য ছোট ছোট নৌকা বোঝাই সবুজ-হলুদ রঙ্গের কাঁচা-পাকা পেয়ারা বিকিকিনির দৃশ্য। নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখতে আসেন দেশ-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা ও দেশ-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখর পেয়ারার ভাসমান বাজার। ভিমরুলী খালের ওপরের সেতুতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। খালে অসংখ্য ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা বোঝাই বাগান থেকে সদ্য তুলে আনা টাটকা পেয়ারা বিক্রি করতে জড়ো হয়েছেন চাষিরা। খালে ট্রলার নিয়ে গান বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছেন ঘুরতে আসা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।

ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারা চাষি বিমল হালদার জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন কম হয়েছে। তবে ভালো দাম পাচ্ছি। গত বছর মণ প্রতি পেয়ারা ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হতো। তবে এ বছর মণ প্রতি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি করছি।’ বিনয়কাঠি গ্রামের সত্যজিৎ হালদার জানান, মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেয়ারা ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেই তুলনায় প্রতি মণ পেয়ারা ৩০০টাকায় বিক্রি করতে পারলে ভাল হতো। এখানে মধ্যসত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে বেশি।’

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মেহেরুবা মাহী জানান, ‘ভাসমান পেয়ারা বাজারটি সত্যিই দারুণ। আমরা থাইল্যান্ডে এমন ফ্লোটিং মার্কেট (ভাসমান বাজার) দেখেছি। অথচ আমাদের দেশেও শুধু মৌসুমি ফল নিয়ে এমন বাজার বসে তা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না।

তাছাড়া এখানে ঘুরতে আসা সবাই খুব আনন্দ করছে, তা দেখে আমরাও বেশ আনন্দ পাচ্ছি।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘এ বছর জেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় পেয়ারার ফলন কম হলেও ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। আমাদের পক্ষ থেকে পেয়ারা চাষিদের সব সময় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।’ জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, ‘ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারা বাজারকে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।