বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী রূপা খাতুনের মৃত্যু হয়েছে মাথায় আঘাতের কারণে। আর মৃত্যুর আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার রূপার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
আজ মঙ্গলবার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা এ প্রতিবেদন সিভিল সার্জনের কাছে জমা দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম খান (ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তথ্যের সত্যতা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, মাথায় আঘাতের কারণে রূপা খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।
গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্ষণ করে। পরে ঘাড় মটকে তাঁকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তাঁর লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করে।
ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পরই অভিযোগপত্র
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মধুপুরের অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কাইয়ুম খান সিদ্দিকী জানান, ময়নাতদন্তের সময় সংরক্ষিত রূপার দাঁত ও পরিধেয় বস্ত্র ডিএনএ পরীক্ষায় পাঠানোর জন্য টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে মঙ্গলবার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন। বুধবার সকালে এগুলো পরীক্ষার জন্য সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। এ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। কোন আইনের কোন কোন ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে, আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষা করে আনা হবে।
রূপাকে হত্যার পর ময়মনসিংহ-বগুড়া রুটে চলাচলকারী ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকেরা স্বাভাবিক ছিল। ঘটনার পরদিন থেকেই তাঁরা স্বাভাবিকভাবে গাড়িও চালিয়েছে। রূপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), বাসের তত্ত্বাবধায়ক সফর আলী (৫৫) এবং বাসচালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। ২৯ আগস্ট শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং ৩০ আগস্ট হাবিবুর ও সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে।
৩১ আগস্ট রূপার লাশ উত্তোলন করে তাঁর ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাঁকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোবাইলে রূপার ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বর্বর ঘটনার বিচার চান। কোনো আসামি যাতে আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্তকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।