#

গত ১৪ মাসে সিরাজগঞ্জের দুটি উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পড়ুয়া শতাধিক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুর রহমান।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ও যমুনা বিধৌত চৌহালী উপজেলার এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) হিসেবে আনিসুর রহমান কর্মরত থাকাবস্থায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে এসব বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন

অভিযানে সাত লাখ ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সকাল কিংবা গভীর রাত কোথাও বাল্যবিয়ের খবর পেলেই ছুটে যেতেন তিনি।

জনবান্ধব এসিল্যান্ড আনিসুর রহমানের অনুকরণীয় এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে স্বীকৃতি হিসেবে গত ২৩ জুন পাবলিক সার্ভিস ডে’তে বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সিরাজগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (যুগ্মসচিব) কামরুন নাহার সিদ্দীকা।

শনিবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুর রহমান।

এসিল্যান্ড আনিসুর রহমান জানান, সিরাজগঞ্জ সদর ও দুর্গম যমুনা বিধৌত চৌহালী উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে এবং চৌহালী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এসব কর্ম এলাকায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা অনেক বেশি। এজন্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রায়ই বাল্যবিয়ে বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতাম।

এসিল্যান্ড বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদান করি। এ সময়কালে অভিযান চালিয়ে ৬৭টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। সর্বোচ্চ ১৩টি অভিযান চালানো হয় পৌর এলাকায়। এছাড়া সয়দাবাদ ইউনিয়নে ১২টি, কালিয়া হরিপুরে ১১টি, রতনকান্দিতে ১০, বাগবাটিতে ৯টি, বহুলী ৫টি, খোকশাবাড়িতে ৩টি, শিয়ালকোলে ২টি, কাওয়াকোলা ও ছোনগাছা ইউনিয়নে একটি করে বাল্যবিয়ে বন্ধ করি।

এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ২২টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি করে, মার্চে ১০টি, মে মাসে ৮টি, জুনে ১৫টি ও জুলাই মাসে ৮টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়।

অপরদিকে, চৌহালী উপজেলায় আরও ৩৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। দুর্গম চরাঞ্চলের এই উপজেলাতে সাড়ে ৬ মাস দায়িত্ব পালন করি। এ দুটি উপজেলায় ১৪ মাস দায়িত্ব পালনকালে ১০১টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করি।

তিনি বলেন, তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় গত সাত মাসে অভিযান চালিয়ে সর্বোচ্চ ২৫ জন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করি। এর মধ্যে নবম শ্রেণির ১৫ ও দশম শ্রেণির ১৩ জন ছিল। বাকিরা তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

অভিযানে বর-কনের বাবা ও কাজীসহ সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের জরিমানা করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে পারবে না মর্মে অভিভাবকদের কাছে মুচলেকাও নেয়া হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুর রহমান বলেন, স্বল্প আয়ের হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে বাল্য বিয়ে দেয়ার প্রবণতাটা বেশি। এছাড়া নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনদের মধ্যেও বাল্যবিয়ে আয়োজনের প্রবণতা রয়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন। পাশাপাশি যার যার অবস্থান থেকে সবাই এগিয়ে আসলে বাল্য বিবাহ মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন