তানজির আহমেদ (২৫) গত বছর তেজগাঁও পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। এরপর চাকরি জোগাড়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হন তিনি। এ নিয়ে বাবা আবু তাহের আর জাহানারা বেগম লিলির সঙ্গে তানজির কথাকাটাকাটি হতো।
পুলিশ বলছে, বেকার থাকা নিয়ে গত শনিবার রাতে তাঁর মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মা জাহানারাকে হত্যা করেন তানজির। সোমবার ঢাকার আদালতে মাকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ আদালতকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত শনিবার রাতে তানজিরের বাবা তাহের তারাবির নামাজ পড়তে মসজিদে যান। তখন বাসায় ছিলেন তানজির আর তাঁর মা জাহানারা। এ সময় বেকার থাকা নিয়ে তানজিরকে গালমন্দ করেন মা। তানজির গালমন্দ সহ্য করতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে মাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় জাহানারার ভাই মোহাম্মদ হোসেন বাবলু বাদী হয়ে তানজীরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তানজির বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। দক্ষিণখানের কাওলার মধ্যপাড়া মাদ্রাসা রোডে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি।
খুনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারেজ মিয়া বলেন, তানজির গত বছর পলিটেকনিক থেকে পাস করেও কোনো চাকরি জোটাতে পারেনি। তাঁর বাবা তাহের একটি গার্মেন্টস কারখানায় স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। তাঁর মা জাহানারা বাসায় থাকতেন। পাস করেও চাকরি জোটাতে না পারায় তানজিরকে তাঁর বাবা-মা বকাঝকা করতেন। বেকার থাকা নিয়ে একাধিকবার তানজিরেরর সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের ঝগড়া হয়েছে। বাবা-মায়ের আচরণে ক্ষিপ্ত ছিল তানজির। শনিবারও বেকার থাকা নিয়ে বকাঝকা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে তানজির তাঁর মাকে হত্যা করে।
অবশ্য তানজিরের স্বজনদের কেউ কেউ বলছেন, পাঁচ বছর ধরে তানজির মানসিকভাবে অসুস্থ। হাসপাতালেও তাঁর চিকিৎসা করানো হয়েছে। তানজিরের খালাতো ভাই তানভীর আহম্মেদ দাবি করছেন, তানজির আর দশটি ছেলের মতো ছিল না। ছোট বেলা থেকে তিনি একা থাকতে পছন্দ করতেন। তাঁর বন্ধু-বান্ধব নেই বললেই চলে। তিনি তানজিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছেন। চাকরির সাক্ষাৎকারে তানজিরের কিছু অস্বাভাবিক আচরণের কারণে চাকরি হয়নি বলে দাবি করেন তানভীর। তিনি বলেন, তানজির কথা বলার সময় উদ্ভট আচরণ করতেন। চাকরি না হওয়ায় প্রতিবেশীরা তাঁকে (তানজির) নানাভাবে অপমান করত। অধিকাংশ সহপাঠীর চাকরি হয়ে যাওয়ার তানজির আরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি বললেন, মাকে খুন করার পর তানজির নিজেই থানায় হাজির হন।
দক্ষিণখান থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা অবশ্য বলেছেন, মাকে খুন করার পর তানজির বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পরদিন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আর তানজির মানসিকভাবে অসুস্থ কি না সে ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা হারেজ মিয়া বললেন, চিকিৎসকেরা ভালো বলতে পারবেন তানজির মানসিকভাবে অসুস্থ কি না? কথা বলার সময় তানজিরকে তাঁর সুস্থই মনে হয়েছে।