ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে বরিশালের উপকূলীয় এলাকায় বাঁধহীন গ্রামে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আলু, বাদাম, কলাই, তৈলবীজসহ রবিশষ্যের ক্ষেত।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে কচা ও বলেশ্বর নদীতীরে বাঁধ না থাকায় টগড়া, চর সাঈদখালী, পাড়েরহাট, চন্ডিপুর, খোলপটুয়া ও চাড়াখালী গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
টগড়া গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বাঁধ না থাকায় চরম আতঙ্কে রয়েছি। প্রাণভয়ে সবাই নানাদিকে ছোটাছুটি করছে। যেকোনো সময় পানি ঢুকে তলিয়ে যেতে পারে গ্রাম। ভেসে যেতে পারে আমাদের সাজানো সংসার।
ওদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা রক্ষা বেড়িবাঁধের ৪৮ নং পোল্ডারের দুটি পয়েন্ট ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে নিজামপুর, কোমরপুর ও সুধীরপুর বেড়িবাঁধ।
পাউবোর কলাপাড়া সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী মেহরাজ তুহিন বলছেন, তিন নদীর মোহনায় বড় ধরণের জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা নেই।
কুয়াকাটা সৈকতলাগোয়া ৪৮ নং পোল্ডারের কাজ চলমান রয়েছে। ৪৭নং পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে বেড়িবাঁধের কাজ হয়েছে।
কলাপাড়ার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুসুরি-মুগডাল,কলাই, খেসারি, মিষ্টি আলু, গোল আলু, বাদাম, তৈলবীজ, সূর্যমূখী, মরিচসহ নানা শষ্যক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
প্রস্তুত স্বেচ্ছাসেবকরা
ইন্দুরকানী উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কচা নদীর তীরবর্তী টগড়া গ্রামের একাংশ ও সাঈদখালী চরের বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি বুঝে তাদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমান জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে থেকে মানুষদের সরিয়ে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার, মেডিকেল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিপিপির লতাচাপলী ইউনিয়ন টিম লিডার মো. শফিকুল আলম বলেন, কলাপাড়া উপজেলায় ৩ হাজার ১৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।
পরিস্থিতির অবনতি হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।
ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে সোমবার ভোর থেকে পটুয়াখালীতে বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও মাঝারি ধরণের বৃষ্টি হচ্ছে।
সেই সঙ্গে থেমে চলছে দমকা বাতাস ও ঝড়ো হাওয়া। বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলছে। এতে পটুয়াখালীসহ পুরো উপকূলের মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। উঁচু ঢেউ আঁচড়ে পড়ছে সৈকতের তীরে। প্রচন্ড ঢেউয়ে টিকতে না পেরে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরারত জেলেরা উপকূলে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছে।
ইতোমধ্যে রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ, মৌডুবী মৎস্য কেন্দ্রে এবং কলাপাড়ার মহিপুর ও আলীপুর মৎস্য বন্দরে অন্তত দুই হাজার ট্রলার নিরাপদে এসে পৌঁছেছে বলে জানান রাঙ্গাবালী মৎস্য কেন্দ্রের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজাদ সাথী।
স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সোমবার ভোর পৌনে ৫টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ মাসুদ রানা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘আশানি’ সোমবার বেলা ১২টায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।
এছাড়া গভীর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও মাছ ট্রলার সমূহকে উক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়।