সিজার করলেন আয়া, নবজাতকের কপালে ৯ সেলাই

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ফরিদপুরে একে বেসরকারি হাসপাতালে প্রসূতি মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন ওই হাসপাতালের আয়া। ডাক্তার ছাড়াই প্রসব করাতে গিয়ে নবজাতকের কপাল কেটে ফেলেছেন ওই আয়া।

রোগীর স্বজনরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে ওই আয়া, হাসপাতালের পরিচালক ও এক দালালকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন বেসরকারি আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে প্রসব করাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটান আয়া চায়না বেগম। পরে ওই নবজাতকের কপালের কেটে ফেলা অংশে ৯টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

রোগীর স্বজনরা স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগ জানালে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে চায়না বেগম, হাসপাতালের পরিচালক পলাশ ও এক দালালকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ওটি স্টাফ নার্স পরিচয়ধারী আয়া চায়না বেগম দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ডাক্তার ছাড়াই নবজাতক প্রসব করে আসছিলেন বলে অভিযোগ মিলেছে।

প্রসূতি মায়ের নাম রুপা আক্তার (২৩)। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ উজানচর মইজুদ্দিন মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শফি খানের স্ত্রী তিনি। প্রসব বেদনা শুরু হলে শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে তাকে ফরিদপুরের বেসরকারি আল-মদিনা হাসপাতালে নেন স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসক ছাড়াই রুপা আক্তারের সিজারিয়ান অপারেশন করেন আয়া চায়না বেগম ও হাসপাতালের অপর দুই আয়া। অপারেশন করতে গিয়ে নবজাতকের কপালের একটি অংশ কেটে ফেলেন। তবে অপারেশন করার সময় থাকা অন্য দুই আয়ার পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

নবজাতকের বাবা শফি খান বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার পর একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাক্তার ডাকার কথা বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ডাক্তার আসবে। রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকান। এরই মধ্যে আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা বেড়ে গেলে তারা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় এবং বলে ডাক্তার ভেতরে আছেন। আয়া চায়না বেগম অপারেশন করেন। তিনি আমার শিশু সন্তানের কপালের একটি অংশ কেটে ফেলেন। পরে তার ৯টি সেলাই দেওয়া লাগছে। বিষয়টি আমরা পরে জানতে পেরে প্রশাসনকে অবহিত করি।’

প্রসূতি রুপা বেগমের ভাতিজা শাকিল জানান, ভূয়া ডাক্তার সেজে অপারেশন করতে গিয়ে হাসপাতালের আয়া নবজাতকের কপাল কেটে ফেলেছে। এতে শিশুটির মৃত‌্যুও হতে পারতো। ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুল আলম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। ইতোমধ্যে হাসপাতাল থেকে তিন জনকে পুলিশ আটক করেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য বিভাগকে বলা হয়েছে।’

বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ডা. আব্দুল জলিল জানান, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কেন ডাক্তার ছাড়া প্রসূতির ডেলিভারি করা হলো সেটি জানার চেষ্টা চলছে। এই অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ফরিদপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা করিম বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের উদাসীনতা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা প্রসূতি মায়ের অপারেশন ও এই জাতীয় কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ডাটাবেজ তৈরি করছি। এ ব্যাপারে মনিটরিং জোরদার করা হবে।’

ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন কর বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর পরই ওই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ওই হাসপাতালের আয়া চায়না বেগম, হাসপাতালের পরিচালক পলাশ ও এক দালালকে আটক করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’