ফের পুরোনো রূপেই বরিশাল নগরী!

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

এইচ আর হীরা॥  বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপে যেন পুরো বিশ্ব এখন থমকে আছে। প্রতিদিনই করোনায় মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। সংক্রমণে অসুস্থের হার যেন এখন লাগামছাড়া। বাড়ছে হাসপাতালগুলোয় উপচেপড়া ভিড়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের জীবিকার সংকট। এখন সবার সামনেই যেন এসেছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সময়। আর ঠিক সেই মুহূর্তে মানুষের জীবন ও জীবিকার চাকা সচল রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাংলাদেশের প্রশাসন। তবে মহামারি দুর্যোগের এমন সময়েও সঠিক পদক্ষেপ নিতেও যেন ভুল করছে না সরকার।

 

 

মানুষের জীবন ও জীবকার চাকা সচল রেখে লকডাউনে শিথিলতা আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের দোকানপাট-শপিংমল। তবে এসব বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিধিনিষেধ।এসব যেন মানুষ বুঝতেও পারছেন না। যদিও সবাই করোনা আতঙ্কে রয়েছেন। তবুও নানা অজুহাতে রাস্তা ছাড়ছেন না এ বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। রাতের বরিশাল নগরীর চিত্র দেখলে মনে হয়, নগরবাসী সচেতন হয়ে গেছে। কিন্তু দিনে আবার আগের রূপে ফিরে যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লকডাউনের কোনো নির্দেশনাই মানেন না নগরবাসী। তবে বিকাল থেকে তারা আবার ঘরে ফিরতে শুরু করেন।বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনা জেলায় ধীরে ধীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষ করে বরিশাল জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

 

 

সিটি কর্পোরেশনসহ ১০টি উপজেলায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত দিন দিন বেড়েই চলেছে।সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বরিশালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে উপসর্গ নিয়ে দুইজন ও করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩০৬ জন। একই সঙ্গে মৃত্যু ছাড়াল ২৫৪।মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস। তিনি বলেন, নতুন ৮৫ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে বরিশালে ৩০ জন। এই নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৫ জন। অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা করার কারণে নগরবাসীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জেল-জরিমানাও করেছেন। তবু মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। আর সন্ধ্যার পর জনশূন্য রাস্তাঘাটের কারণে বরিশাল নগরী অনেকটা ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে।

 

চলতি মাসের (৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া লকডাউন ক্রমে ক্রমে বাড়িয়ে বর্তমানে তিন সপ্তাহের লকডাউন পালন করার নির্দেশনা প্রদান করেছে সরকার। কিন্তু লকডাউন উপেক্ষা করে প্রতিদিনই রাস্তাঘাটে নামছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। যদিও রাস্তায় নামা জনগণের সংখ্যা বরিশালের মোট জনসংখ্যার মাত্র একভাগ। তবে এ সংখ্যা শূন্যতে নামিয়ে আনার নানামুখী তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম।লকডাউন শিথিল করে দোকান-শপিংমল খুলে দেয়ায় বরিশাল নগরীর সদর রোড, বাজার রোড এবং বিভিন্ন বাজারে পুরনো চিত্র দেখা গেছে। রিকশা, অটোরিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত যানবাহন, এমনকি হেঁটেও অনেক মানুষকে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে এবং সড়ক মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

 

 

অপ্রয়োজনীয় যানবাহন আটকে দেয়া হচ্ছে। অযথা রাস্তায় বের হওয়া মানুষকে আর্থিক দণ্ড দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপরও লোকজনকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না।নগরীর অনেক এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ওষুধ ও মুদি দোকান ছাড়াও রড-সিমেন্ট, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক্স ও কসমেটিকসসহ অনেক দোকান খোলা রাখতে দেখা গেছে। লকডাউন উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনীয় দোকান ও গোডাউন খোলা রাখায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সুব্রত কুমার বিশ্বাস।

 

 

জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, জনগণকে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। নিজ, পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষকে সুস্থ রাখতে লকডাউন সময়ে সবাইকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।প্রাণঘাতী করোনার বিস্তার রোধে একের পর এক উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা নজিরবিহীন বলে মনে করেন এখানকার মানুষ। করোনা মোকাবেলায় বহিরাগতদের প্রবেশ ও নগর থেকে বের হওয়া ঠেকাতে পুলিশ মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১০টি চেকপোস্ট বসিয়েছে।

 

 

এসব চেকপোস্টে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে কাজ করছে নগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। এদিকে শুধু পুলিশের চেকপোস্ট নয়, এর পাশাপাশি বসানো হয়েছে ক্লোজডসার্কিট ক্যামেরাও। এরই মধ্যে বরিশাল মহানগরীর তিনটি এন্ট্রি পয়েন্টে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, বরিশাল মহানগরীকে করোনামুক্ত রাখতে শুরু থেকেই আমরা সক্রিয় কাজ করছি। চেকপোস্টগুলোয় কারা আসছেন, কারা যাচ্ছেন এবং পুলিশ সদস্যরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না, সেসব তদারকির জন্যই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।