৪৮৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ: রূপালী ব্যাংকের ৫ শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৮ জনের নামে মামলা

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪৮৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রূপালী ব্যাংকের পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৮ জনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারি পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

মামলার আসামিরা হলেন-ডলি কন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা এমডি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, এমডির স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডলি আক্তার, রুপালি ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপক খালেদ হোসেন মল্লিক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সোলায়মান, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. গোলাম সারোয়ার, উপ-মহাব্যবস্থাপক এ এস এম মোরশেদ আলী, সহকারি মহাব্যবস্থাপক
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও জিওগ্রাফ সার্ভে করপোরেশন লি. এর মালিক পারভেজ বিন কামাল।

আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪০৬/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

মামলার এজহারে বলা হয়, অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার আশ্রয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসামিরা রূপালী ব্যাংক লি. মতিঝিল করপোরেট শাখা থেকে ৭৫১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ১০৬ টাকা উত্তোলন করেন। বিভিন্ন সময়ে সুদাসল বাবদ ৩০৮ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০১ টাকা পরিশোধ করে অবশিষ্ট ৪৪৩ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০৪ টাকা সুদসহ ৪৮৯ কোটি ৮ লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫ টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করেন।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলি কন্সট্রাকশনের মালিক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মতিঝিল করপোরেট শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলেন। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কার্যাদেশ লিয়েন রাখার শর্তে ১০৪ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।

এরপর সংশ্লিষ্ট শাখা, বিভাগীয় ও প্রধান কার্যালয়ের শিল্পঋণ বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৯৯০তম বোর্ডসভায় ৫৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর থেকে কয়েক দফায় প্রতিষ্ঠানটির নামে ঋণ অনুমোদন করা হয়।

 

ডলি কনস্ট্রাকশন ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঋণের ৭৫১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ১০৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে এবং এর বিপরীতে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০৮ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০১ টাকা পরিশোধ করে।

প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ কোটি ৮ লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫ টাকা, যা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, রুপালি ব্যাংকের রূপালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৯৯০ তম সভায় ঋণ ছাড়ের বিষয়ে যে শর্ত দেওয়া
হয়েছিল তার বেশিরভাগই পরিপালন করা হয়নি। রূপালী ব্যাংক লি. এর সর্বশেষ ২০১৩ সালে প্রকাশিত ক্রেডিট ম্যানুয়ালের বর্ণিত নিয়মসমমূহ উক্ত ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সময় তা ব্যাংকারগণ অনুসরণ করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক কর্তৃক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শাখার প্রস্তাব ৫০ শতাংশ মার্জিন বিবেচনায় না নিয়ে রূপালী ব্যাংক লি. প্রধান কার্যালয়ের শিল্পঋণ বিভাগের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা ২০% মার্জিনে ঋণের প্রস্তাব করেন। তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ব্যাংকের তথা জনগণের আমানতের অর্থের ক্ষতি সাধিত হয়।