বেলায়েত বাবলুঃ রাতে ফেসবুক চালাতে গিয়ে ৯৪ ব্যাচের এক বন্ধুর স্টাটাস দেখে কষ্টের মধ্যেও হাসি পেলো। জাকিয়া ইয়াসমিন নামের ওই বন্ধু তার ফেসবুক পেইজে লিখেছে- চাল চুরি হইছে, তেল চুরি হইছে এবার মসলা হলেই মজাদার খিচুড়ি।
আরেকটি স্টাটাস ছিলো এরকম- শুনলাম সরকার নাকি মালদ্বীপে ত্রাণ সহায়তা পাঠাইছে। তো সাথে দুই চারজন মেম্বর চেয়ারম্যান পাঠাইয়া দেলে দেশের মাল তো আবার দেশে ফেরত আইতো।
সরকারি ত্রাণ চুরি লোপাট নিয়া বেশ কিছু দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ ও প্রচারিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও।
করোনায় যেমন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তেমনি ত্রাণ চোরদের সংখ্যাও বাড়ছে অস্বাভাবিকহারে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এই আশংকা করে টাঙ্গাইলে স্বামী ও সন্তানরা মিলে এক মাকে বনের মধ্যে ফেলে রেখে এসেছে।
এসংবাদটি মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাওকে নাড়া দিয়েছে। বিষয়টির অবতারনা করে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন মানুষ কিভাবে এতো অমানবিক হতে পারে? আসলেই মানুষ কিভাবে অমানুষ বা জানোয়ার হয় তার উত্তর মেলা কঠিন।
দেশে করোনা ধীরে ধীরে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ৪৩টি জেলা আক্রান্ত হয়েছে। বরিশাল জেলায় দুইজন চিকিৎসক, দুইজন নার্সসহ শুক্রবার পর্যন্ত ১৭ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সকলে যখন আমরা করোনা থেকে মুক্তি পেতে ঘরে বসে দয়ালু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি ঠিক সেই সময়ে একদল লুটেরা তথাকথিত জনপ্রতিনিধি ও অসাধু ব্যবসায়ি সরকারি ত্রান লুটপাটের মহোৎসবে মেতেছে। মিডিয়ার বদৌলতে যা প্রকাশ হচ্ছে তাতো রীতিমতো ভয়ংকর। না জানি যা গোপনে থেকে যাওয়া চিত্র আরো কতোটা ভয়ংকর।
শুনেছি ৭১ সালে আমাদের দেশীয় একদল হায়না দেশদ্রোহীর ভূমিকায় নেমে স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছিলো। ওরা পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মিশে এ দেশটাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। পাকিদের কাছে ওরা ছিলো রেজাকার অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবী।
স্বেচ্ছায় পাকিদের গোলামি করে কিছু সুবিধা পাওয়ার লোভে ওরা আমাদের দেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিলো। আজ করোনার কারনে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষনাসহ অনেক জেলা লকডাউন ঘোষনা করেছেন। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের সাহাযার্থে ত্রান সামগ্রী বিতরন কার্যক্রম চলছে দেশ জুড়ে।
এ কার্যক্রম শুরুর পর পরই এক শ্রেনীর লুটেরা গরীবের ত্রান লোপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নামধারী ওইসকল জনপ্রতিনিধিরা যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কার থেকে কে বেশী চুরি করতে পারে চলছে সেই প্রতিযোগিতা। আর তাদের সেই প্রতিযোগিতার ফলে বুভক্ষ মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে সময়টাতে রেজাকারদের দেশের জন্য যুদ্ধ করার কথা ছিলো তখন তারা ধর্ষণ, লুটপাট আর হত্যাকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিলো।
ঠিক আজো তাদের প্রেতাত্মারা কোথায় জনগনের পাশে দাঁড়াবে তা না করে তারা আজ লুটপাটে লিপ্ত হচ্ছে। তারা কতোটা লোভী, কতোটা বর্বর তা ভাবলেও গা শিহরে উঠে। সরকার যুদ্ধাপরাধী অনেকের বিচার করেছেন। রায়ে দন্ডিত অনেককেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছেন।
আমরা আশা করবো যারা ত্রানের চাল চুরি করে ধরা পড়ছে তাদের যেন যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হয়। এবং তারা যেন আর কখনো দলে ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়। করোনা ভাইরাস থেকে দয়ালু সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে রক্ষা করুন।
——বেলায়েত বাবলু
লেখক ও গণমাধ্যম কর্মী