সিগারেটের টুকরায় ৩ হাজার অগ্নিকাণ্ড, শীর্ষে ঢাকা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ধূমপান মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপান করার পর অনেকেই জ্বলন্ত ফিল্টারটি মাটিতে ফেলে দেয়। কখনো রাস্তায়, কখনো বারান্দায়, কখনো বা কারখানায়। একটিবার চিন্তাও করি না নিজের প্রাণহানির সঙ্গে সঙ্গে অপরের জীবনও হুমকিতে ফেলছি আমরা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশে মোট ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ৩ হাজার ১০৮টি ঘটনায় আগুনের সূত্রপাত হয়েছে সিগারেটের টুকরা থেকে। বাংলাদেশে দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশের সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ১৫ শতাংশের কারণ সিগারেটের টুকরা।

এ ছাড়া ৮ থেকে ১২ টাকা মূল্যের সিগারেটের কারণে ২০১৮ সালে পুড়েছে মোট ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৫ টাকার মালামাল। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি বগুড়া জিলা স্কুলের গুদাম ঘরে লাগা আগুনে অষ্টম ও নবম শ্রেণির প্রায় সাড়ে তিন হাজার পাঠ্যবই ও খাতা পুড়ে যায়। গুদামে বৈদ্যুতিক কোনো লাইন না থাকলেও কীভাবে ঘটলো এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা?

সংবেদনশীল এই মামলার তদন্তে নামে ফায়ার সার্ভিস। তদন্তে উঠে এসেছে, কক্ষের পেছনের খোলা জানালা দিয়ে কেউ ভেতরে সিগারেট ফেলেছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাঙামাটির লংগ উপেজলার মাইনীমখ বাজার সংলগ্ন কাঠের মিলে সিগারেটের আগুনে ভস্মীভূত হয় কোটি টাকার কাঠ। এর কয়েকদিন পর ২২ ডিসেম্বর কেশবপুরে ২টি পান বরজে আগুন লেগে ৩৩ শতাংশ জমির পান পুড়ে যায়। তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানতে পায় এই আগুনের মুল কারণও ছোট্ট সিগারেট।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে লাগা আগুনের ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মালামাল। এসব ঘটনায় মধ্যে ৩৯ শতাংশ শর্ট সার্কিট এবং ১৮ শতাংশ চুলার আগুনে। এই কারণে গত মোট ১১ হাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয়েছে মোট ২৩৯ কোটি টাকার মালামাল।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী আহমদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুন লাগার জন্য এটা খুবই তুচ্ছ কারণ। সামান্য খামখেয়ালীর কারণে আমরা মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছি, দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করছি। সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের অবশ্যই সিগারেট খাওয়া ছাড়তে হবে, যদি কেউ সিগারেট খাই অবশ্যই তাকে ফিল্টারটি ফেলে নিজ দায়িত্বে আগুন নেভাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‌‌‌‌‘দেশের সিংহভাগ আগুনের কারণ সচেতনতার অভাব। এ ছাড়াও দিনে দিনে দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বেড়েছে। তবে বাসা-বাড়িতে অপরিকল্পিতভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া, নিম্নমানের তার ব্যবহার করার ইত্যাদির কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে। অনেক বাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পুরনো এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। এগুলোর বিষয়ে সচেতন হলেই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।’

দুর্ঘটনায় শীর্ষে ঢাকা

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের সব বিভাগ থেকে ঢাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা ও ক্ষয়-ক্ষতি বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৮ হাজার ৪৬১টি আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, এর ২০৮৮টি ঢাকায়, চট্টগ্রামে ২৮৫ ও রাজশাহীতে ১১৬টি। সারাদেশে ৫০৮টি নৌ দুর্ঘটনার মধ্যে ঢাকায় ১৯৫টি, চট্টগ্রামে ৫৪ ও খুলনায় ৪০টি। এসব ঘটনায় শুধুমাত্র ঢাকায় প্রাণ হারায় ১২১ জন।

এক বছরে দেশে ১৬টি ভবন ধ্বসের ঘটনার ১০টি ঢাকায়। এতে ৬ জন নিহত হয়। দেশের গার্মেন্টগুলোতে ১৭৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে ১১৫টি ঢাকায়। শিল্প কারখানায় ১১৩১টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ৫২৬টি ঢাকায়।

কেন এত দুর্ঘটনার শিকার ঢাকা? জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বলেন, ‘ঢাকার ডেনসিটি বেশি। অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বসবাস করে। অনেক অপরিকল্পিত ও অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। নতুন নতুন ইলেকট্রিক গ্যাজেট, ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জারসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থের প্রাপ্যতা বেশি। তাই ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি।’

প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম বৃদ্ধি

দুর্ঘটনার পাশাপাশি ২০১৮ সালে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম ও কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর মোট ১ লাখ ৮০ হাজার জনসাধারণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ১১৯ জন গেজেডেট/নন-গেজেডেট অফিসার, ৩৪২ জন ড্রাইভার, ১১৫০ জন ফায়ারম্যান এবং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৩২০৮ জন কর্মচারীকে।