#

আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও সীমান্ত ব্যাংকের পর পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে এবার চালু হতে যাচ্ছে ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ’। পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে এ ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নেয়া হলেও লভ্যাংশ পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে পুলিশের মাঠপর্যায়ে ছিল অসন্তোষ। তবে সে অসন্তোষ আর থাকছে না। পুলিশ সদর দফতর ঘোষণা দিয়েছে, সব পুলিশ সদস্যই ব্যাংকের লভ্যাংশ পাবেন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশের লভ্যাংশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে যাবে। এরপর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ব্যাংকের অর্থ জমাকারী সদস্যদের নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ প্রতি বছর দেয়া হবে।

মাঠ পুলিশের কাছে পাঠানো গত ২৪ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (কল্যাণ ট্রাস্ট) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে প্রস্তাবিত ব্যাংকে বিনিয়োগ করে পুলিশ সদস্যরা কী কী সুবিধা পেতে পারেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। একাধিক জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) পুলিশ সদর দফতরের এ সংক্রান্ত চিঠিপ্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব দেন তৎকালীন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। ৪০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে পারলে ব্যাংকের অনুমোদন দিতে সরকারের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এরপরই পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ড পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন।

সে অনুযায়ী আইজিপি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার পুলিশ সদস্যের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা করে নিয়ে ৪৩০ কোটি টাকার বেশি মূলধন সংগ্রহ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কল্যাণ ট্রাস্টের আয় বৃদ্ধি হলে পুলিশ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা এবং কর্মক্ষেত্রে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হবে। পুলিশ সদস্যদের অবসর সুবিধা, তাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি ও ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হবে। এই ব্যাংকের মাধ্যমেই এখন থেকে পুলিশ সদস্যদের বেতন-ভাতা দেয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে ‘কমিউনিটি ব্যাংক’। চলতি বছরের আগস্টের মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ছয় থেকে ১০টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

গুলশানের পুলিশ প্লাজায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। মিডল্যান্ড ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মশিহুল হক চৌধুরীকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ২৭ হাজার করে টাকা উত্তোলনের পর লভ্যাংশ পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে মাঠ পুলিশের মধ্যে অসন্তোষের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসে। কমিউনিটি ব্যাংকের লভ্যাংশ কল্যাণ ট্রাস্টে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সাধারণ পুলিশ সদস্যরা জানান, কনস্টেবল থেকে এসআই পদের কর্মকর্তারা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তেমন উপকৃত হন না। অথচ পুলিশে সংখ্যার দিক থেকে তারাই সিংহভাগ। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাইলে ব্যাংকের লভ্যাংশ শুধুমাত্র ‘শেয়ার হোল্ডারদের’ হিসাবে জমা হওয়া উচিত।

কল্যাণ ট্রাস্টে যদি লভ্যাংশ যায়, তাহলে ‘শেয়ার হোল্ডাররা’অবসরে গেলে সেখান থেকে কোনো সুবিধা পাবেন না। এছাড়া কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পান সহকারী পুলিশ সুপার থেকে উপরের কর্মকর্তারা। যে কারণে ব্যাংকের লভ্যাংশ কল্যাণ ট্রাস্টে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। তাদের এ অসন্তোষের বিষয়টি বিপিকেটি ব্যাংক (BPKT Bank) নামের একটি ফেসবুক পেজেও উঠে আসে। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হবার পর পুলিশ সদর দফতর থেকে পুনঃঅবহিতকরণ চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠির মাধ্যমে মাঠ পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে প্রতিটি বিভাগ ও জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

 

১. ব্যাংকের লভ্যাংশ বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে ব্যাংক তহবিল খাতে জমা হবে। কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি বছর অর্থ জমাকারী সদস্যদের নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ দেয়া হবে।

২. পুলিশ বিভাগের চাকরি থেকে অবসর কিংবা ইস্তফা প্রদানকারী সদস্যরা তাদের জমাকৃত অর্থ বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে উত্তোলন করতে পারবেন।

৩. কল্যাণ-ট্রাস্টে অর্থ জমাদানকারী সদস্যদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে অবসর নিয়েছেন তাদের অর্থ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেরত দেয়া হয়েছে।

৪. সদস্যরা স্বল্প সুদে ঋণসুবিধা পাবেন।

৫. জমি ক্রয়, গৃহনির্মাণ-মেরামত, ব্যবসা উদ্যোগ প্রভৃতি ঋণের ক্ষেত্রে সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

৬. সদস্যরা প্রয়োজনে ব্যাংক হতে বেতনের অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।

৭. বিশেষ ক্ষেত্রে বিনা জামানতে ঋণ দেয়া সম্ভব হবে।

৮. নিজস্ব ব্যাংক থাকায় আর্থিক লেনদেন সহজ হবে।

৯. অন্য অনেক সংস্থার ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশেও নিজস্ব ব্যাংক থাকলে সঠিক ও স্বচ্ছ লেনদেনের কারণে জনগণের মাঝে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

ব্যাংক থেকে পুলিশ সদস্যদের এসব সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয় তুলে ধরার পরও ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ কল্যাণ-ট্রাস্টে সদস্যদের চিকিৎসার্থে শুধুমাত্র ব্যয়িত হবে- এ রকম একটি ভুল ধারণা কোনো কোনো সদস্যের মনে জন্মেছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংক লভ্যাংশ কল্যাণ-ট্রাস্টে জমা হলে তা থেকে জমাকারী সদস্যদের নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ দেয়া হবে। (যা উপরে ১নং-এ বর্ণিত রয়েছে)

অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘পুলিশের অনেক সদস্যের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদানের অর্থ শুধু এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য ব্যয় হয়। প্রকৃতপক্ষে এ অর্থ পুলিশের সব সদস্যের জন্যই চিকিৎসা অনুদান হিসেবে ব্যয় হয়। এ যাবৎকাল বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট হতে এক হাজার ৫৩৯ জন বিভিন্ন পদের পুলিশ সদস্যকে মোট ১৪ কোটি ৯৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৬২ টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৩ জন এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব, এক হাজার ৩০৫ জন কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর এবং ৪১ জন সিভিল সদস্য। এতে দেখা যায় যে, কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সদস্যরাই অধিক সংখ্যায় অনুদান পেয়েছে।’

চিঠিটির শেষে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে লেখা হয়, ‘আপনার অধীনস্থ সব ইউনিটের সদস্যদের উপরোক্ত বিষয়গুলো শিগগিরই কল্যাণসভা আহ্বান করে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো। পাশাপাশি এ বিষয়সমূহ নোটিশবোর্ড ও পুলিশ লাইনে বিভিন্ন দৃশ্যমান জায়গায় টাঙানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম বলেন, ‘পুলিশের কল্যাণেই কমিউনিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। শিগগিরই সংগৃহীত ৪০০ কোটি টাকার মূলধন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আগামী আগস্টের মধ্যেই এর কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছে।’

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন