২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে ময়মনসিংহে কর্মরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকরামের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, যৌনপল্লীতে নারী পাচার, সন্ত্রাসীদের অপরাধ কার্যক্রমে সহযোগিতার অভিযোগ ছিলো।,
সে সময়ে এসআই আকরামের এইসব অপরাধের চিত্র পত্রিকায় তুলে ধরেই রোষানলে পরেন দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক, দৈনিক আমাদের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি খায়রুল আলম রফিক।,
দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের ধারাবাহিকতায় শহরের চরপাড়ায় মাদক কারবারিদের সাথে এসআই আকরাম হোসেনের ঘনিষ্টতা বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সময় এসআই আকরাম হোসেন কর্মরত ছিলেন ৩নং ফাঁড়ি পুলিশে।.
সাংবাদিক রফিকের অভিযোগ, এসআই আকরাম হোসেন তাকে আটক করে হেফাজতে রাখার নামে অকথ্য নির্যাতন চালায় যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আক্রামের যোগসাজশে ষড়যন্ত্রমূলক ৩টি মামলায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দুই মাস থাকতে হয় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে।.
এর আগে তার চোখ বেঁধে অকথ্য নির্যাতন করে এসআই আকরাম হোসেন, অভিযোগ সাংবাদিক রফিকের।
এসআই আকরামের বিরুদ্ধে সাংবাদিক রফিক ইতিমধ্যে পুলিশের ‘আইজিপি’স কমপ্লেইন মনিটরিং’ সেলে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। যার অভিযোগ নম্বর SL-17 এবং তারিখ ৫ই জানুয়ারি ২০২১।.
অভিযোগ পত্রে তিনি জানান, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইটের বিপরীত দিকে আমি অবস্থান করছিলাম। এসআই আকরামের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ আমার চোখ বেঁধে একটি কালো গাড়িতে করে আমার পত্রিকার কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা আমার জমি ক্রয়ের দলিল, ব্যাংকের চেক ও কম্পিউটার জব্দ করে। দলিল ও ব্যাংক চেক প্রতিপক্ষের কাছে তুলে দিয়ে জব্দ দেখানো হয় শুধু কম্পিউটার। সেখান থেকে আমাকে নেয়া হয় ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পুরাতন গুদারাঘাটস্থ দুর্গম চর এলাকায়। দু’চোখ বেঁধে দু হাত পেছনে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়।
কিন্তু দুই বছর পরে বিষয়টি কেন সামনে এনেছেন এমন প্রশ্নে সাংবাদিক রফিক জানান, তিনি ঘটনাটি চক্ষু লজ্জার কারনে সামনে আনতে পারেননি এতদিন। তিনি জানান গত বছরের ডিসেম্বরে ২২ তারিখে অজ্ঞাত কোন এক ব্যাক্তি তার ম্যাসেঞ্জারে চোঁখ বাঁধা ছবি প্রদান করেন। যা দেখে তিনি আতঁকে উঠেন এবং সেই সব নির্যাতনের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসতে শুরু করে। এর পরপরই তার এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হতে শুরু করে। একারনেই দুইবছর পর মুখ খুললেন বলে জানান তিনি।
এভাবেই সাংবাদিক হারুন অর রশীদ এর উপস্থাপনায় একটি ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন সাংবাদিক রফিক। এসময় অনুষ্ঠানে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তুলে ধরেন তাকে নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী সমূহ। এসময় তিনি আশংকা করে বলেন, ‘হয়ত তাকে ক্রশফায়ারেরও প্রস্তুতি ছিল টাকার বিনিময়ে।’ লাইভ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরেক নির্যাতন হওয়া সাংবাদিক সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক (তদন্ত) নুর খান।
সাংবাদিক রফিকে কান্নায় অনুষ্ঠানের পরিবেশ অনেকটাই ভারি হয়ে উঠে। এসময় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক (তদন্ত) নুর খানকে অনেকটা স্তম্ভিত হতে দেখা যায়।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিকের পক্ষে আইনজীবী এ্যাডভোকেট খায়ের আদালতে দুই পুলিশ সহ ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এরে ১৩(১), ২(খ), ১৫ (১) ও ১৫ (৩) ধারায় এই মামলা করা হয়।