গরমে হাঁসফাঁস মানুষের জীবন। এই অবস্থায় শুরু হয়েছে লোডশেডিং। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকা এক থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে। গরম ও লোডশেডিং থেকে বাঁচতে বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছে মানুষ। আর এতে করে চাহিদা বেড়ে গেছে চার্জার ফ্যান, লাইট, আইপিএস ও সোলারের মতো যন্ত্রগুলোর। দামও বেড়েছে এসব পণ্যের।
ক্রেতারা বলছেন, ঘোষণার পর সময়সূচি মানতে পারেনি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা সময়ের বাইরেও লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার কোথাও কোথাও তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর ঢাকার বাইরে তো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। এজন্য বাধ্য হয়ে গরম থেকে বাঁচতে এসব যন্ত্র কিনছেন তারা।
রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম, নবাবপুর ও মালিবাগের বেশ কিছু ইলেকট্রনিক্স দোকানে দেখা গেছে এসব পণ্যের প্রচুর ক্রেতা। তারা রিচার্জেবল ফ্যান-লাইট, কুলার, আইপিএস এবং সোলার কিনছেন।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটে মগবাজার থেকে আসা সুমন আসফার বলেন, বাসায় ছোট্ট বাচ্চা। কাল (মঙ্গলবার) দুই-তিন দফা কারেন্ট গেছে। বাচ্চাটার খুব কষ্ট হয়। সেজন্য কিনতে হচ্ছে চার্জার ফ্যান।
পাশের এক ক্রেতা মিরপুর থেকে এসেছেন। সিয়াম নামের এই ক্রেতা বলেন, রূপনগরে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার কথা। অথচ ভোর থেকে সারাদিন তিনবার লোডশেডিং হয়েছে। এখন আইপিএস না থাকলে টিকা যাবে না। বাসায় যেটি ছিল তা দুই-তিন বছর খুব একটা প্রয়োজন হয়নি। এখন ব্যাকআপ দিচ্ছে না, তাই আবার কিনতে হচ্ছে।
নবাবপুর মার্কেটে ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডের রিচার্জেবল ফ্যানের পরিবেশক সালমান হক বলেন, সরকারের লোডশেডিংয়ের ঘোষণার পর হুট করে ফ্যানের চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে সেই তুলনায় সরবরাহ নেই।
এদিকে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে এসব ইলেকট্রনিক্স পণ্যের। একই সঙ্গে দাম বেড়েছে।
সিরাজুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদের আগে একটি সনিক ব্র্যান্ডের কুলার ফ্যান কিনেছি সাড়ে ১০ হাজার টাকায়। সেটি আরেক ঘরের জন্য কিনতে এসে দেখি সাড়ে ১৩ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। তাও পছন্দের মডেলটি নয়, আরেকটি।
বিক্রেতারা বলছেন, বাড়তি চাহিদার কারণে আমদানিকারকরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন। বাধ্য হয়ে তারাও দাম নিচ্ছেন বেশি।
সায়মা ইলেকট্রনিক্সের কর্ণধার আজাহার বলেন, গত দুই সপ্তাহে কোনো কোনো পণ্যের দাম এক হাজার টাকা বেড়েছে। চায়নার একটা চার্জার ফ্যান ছয় মাস আগে ছিল তিন হাজার টাকা, সেটি এখন সাড়ে চার হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব পণ্যের কোনো প্রসিদ্ধ আমদানিকারক নেই। যে যেভাবে পারছে বাড়তি দাম নিচ্ছে। তাদের কাছেও চাহিদার তুলনায় চার্জার ফ্যানের সংখ্যা কম। কোনো কোনো আমদানিকারকের কাছে ফ্যানই নেই।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, প্রতি বছর মার্চ থেকে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে। জুলাই-আগস্টে এসে কমে যায়। কারণ তখন গরম খুব একটা থাকে না। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। আবার সিজনের শেষে লোডশেডিংয়ের ঘোষণায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে।
দোকানিরা বলছেন, দুদিন ধরে অধিকাংশ ক্রেতাই চার্জার ফ্যান চাইছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ফ্যানের অর্ডার আসছে। কুলার, আইপিএস ও সোলার প্যানেলের তুলনায় চার্জার ফ্যান বিক্রি বেড়েছে বেশি। অন্য কোনো বছর এত ফ্যান বিক্রি হয়নি। সে কারণে সরবরাহ নেই ফ্যানের। যা দাম বাড়ার প্রধান কারণ।
এদিকে যারা সামর্থবান ক্রেতা তারা বেশি কিনছেন আইপিএস। বাজারে এখন সিঙ্গার, রহিম আফরোজ, ফিলিপস, বাটারফ্লাই, নাভানা, সুকান ও অনিকসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আইপিএসের বিক্রি বেড়েছে।
বাটারফ্লাইয়ের একটি শোরুমের ইনচার্জ ফরিদ হোসেন বলেন, আইপিএসের দাম নির্ভর করে এর ওয়াট বা কার্যক্ষমতার ওপর। ব্র্যান্ডের ৬০০ ওয়াটের একটি আইপিএস আট হাজার ৫০০ থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০০ ওয়াটের দাম পড়বে সাড়ে ছয় হাজার টাকার ওপরে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তের পর থেকে ইলেকট্রনিক্স বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের আখের গোছাতে শুরু করেছেন। এমন প্রমাণ মিলেছে গত মঙ্গলবার।
এদিন দুই হাজার ৭০০ টাকা দামের ফ্যান বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ১০০ থেকে চার হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি ফ্যানে বাড়তি লাভ করছে ৪০০-১৭০০ টাকা। এসব অভিযোগে ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেটে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় দুটি ইলেকট্রনিক্স দোকান মালিককে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই কারণে নবাবপুর ইলেকট্রনিক্স মার্কেটেও অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। সেখানেও বেশি মুনাফা করায় দ্য লাকি ইলেকট্রিক এজেন্সিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।