‘লিটনের অধিনায়কত্বের সফর শুরু হয়ে গেলো’

:
: ২ years ago

আগাম ঘোষণা দিয়ে আগে এভাবে কেউ এত বড় সাফল‌্য পেয়েছিল কি না নিশ্চিত করতে পারলেন না কেউ। তবে লিটন দাস দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি যা বলেন তা করে দেখান! ভারতকে আতিথেয়তা দেওয়ার আগে সাদামাটা ক্রিকেটারই ছিলেন তিনি। নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের হঠাৎ ইনজুরিতে তাকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয় বিসিবি।

প্রস্তুত না থাকলেও লিটন আপত্তি করেননি। কিন্তু দায়িত্ব যখন নিজ কাঁধে, তখন বড় কিছু করে দেখাবেন সেই জেদ ছিল। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অকপটে বলেও দিয়েছিলেন, ‘আমার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কে যেন প্রশ্ন করেছিলেন, সিরিজের ট্রফি রেখে দিতে চাই কি না? আমি বলেছিলাম অবশ্যই। অধিনায়ক হিসেবে যখন এমন বড় একটা সিরিজ খেলবো, তখন আমাদের চাওয়াই থাকবে যে সিরিজটা জিতবো।’

 

লিটন কথা রেখেছেন। ২-১ ব‌্যবধানে জিতেছেন সিরিজ। ভাগ‌্য পরীক্ষাতেও তিনি সফল। টানা তিন ম‌্যাচেই জিতেছিলেন টস। ফলে নিজেদের পছন্দের কাজটাও আগেভাগে করতে পেরেছিল বাংলাদেশ, যা ম‌্যাচে বড় নিয়ামক হিসেবেও কাজ করেছে। সীমিত পরিসরের সিরিজে প্রাপ্তির খাতায় শুধু ব‌্যাট-বলের সাফল‌্যই নয়, অধিনায়ক লিটনও ঢুকে গেছেন বলে বিশ্বাস নাজমুল আবেদীন ফাহিমের।

শৈশবগুরু ফাহিম লিটনকে প্রথম আন্তর্জাতিক ম‌্যাচে ব‌্যাটিংয়ে নামতে দেখে ফেসবুকে স্ট‌্যাটাস দিয়েছিলেন, ‘এই আসছে আমাদের তারকা!’ সেই তারকার হাত ধরেই ভারতকে দ্বিতীয়বার ওয়ানডে সিরিজ হারালো বাংলাদেশ। দলীয় পারফরম‌্যান্সের পাশাপাশি লিটনের অধিনায়কত্বে বিমুগ্ধ ফাহিম, ‘ওকে বেশ ভালো মনে হয়েছে। কারণ ও চাপের সময় নিজেকে ধরে রাখতে পেরেছে। এটা সবচেয়ে ভালো দিক। ফিল্ডিংয়ের সময় অধিনায়কের মুখের অবয়ব দেখে বোঝা যায় সে চাপে আছে কি না। সেখানে লিটনকে ম‌্যাচিউর্ড মনে হয়েছে।’

লিটন নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন, এটা মনে ধরেছে ফাহিমের, ‘ওর নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে তা বোঝা গেছে। বোলিং পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে, ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের সিদ্ধান্তে নিজে আস্থা রেখেছে। আমি নিশ্চিতভাবে ওকে ১০ এ ৮-৯ দিবো। শুরুটা যথেষ্ট ভালো হয়েছে। বড় দলের বিপক্ষে এই সিরিজ জয় ওকে আরও সাহসী করে তুলবে।’

 

দলে ফিরে তামিম নিজের আগের আসনে বসবেন। লিটনও ফিরে যাবেন নিজের ঠিকানায়। তবে তাকে সহঅধিনায়ক করার চিন্তা ভাবনাও চলছে। বিসিবি তাকে সহঅধিনায়ক করবে কি করবে না তা নিয়ে চিন্তিত নন ফাহিম। বরং অধিনায়ক লিটনের লম্বা সফর এই সিরিজ দিয়ে শুরু হয়ে গেছে বলে মনে করছেন তিনি।

ফাহিম বলেন, ‘তাকে সহঅধিনায়ক করা হোক বা না হোক এখন থেকে ও খেলাটাকে অন‌্যভাবে দেখবে। অধিনায়কের চোখ দিয়েই খেলাটাকে দেখবে। কারণ ওকে একবার অধিনায়ক করা হয়েছে এবং সে প্রমাণ করেছে যে তার সামর্থ‌্য আছে। সামনেও তাকে নিয়ে আবার ভাবনা আসবে। আগে সে যেভাবে খেলা দেখতো, নিজেকে যেভাবে পরিচালনা করতো, তার মধ‌্যে এখন পরিবর্তন অবশ‌্যই আসবে। ওর শিখনপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো। সহঅধিনায়ক তো শুধুমাত্র একটা পদ। নিজেকে আস্তে আস্তে ও গড়ে তুলবেই।’

তাবে লিটনকে ভবিষ‌্যতের কাণ্ডারি হিসেবেও দেখছেন শৈশবগুরু, ‘তাকে অবশ‌্যই ভাবা যায় (অধিনায়ক হিসেবে)। এটা শুধুমাত্র ব‌্যক্তিগত পারফরম‌্যান্সের কারণেই চিন্তা করা যাবে তেমনটা নয় বা কীভাবে বোলিং পরিবর্তন করলো বা ফিল্ডিং পরিবর্তন করলো তেমনটা নয়। তাকে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গোটা দলের সম্মানটা কীভাবে সে বয়ে নিলো সেটাও ভাববার বিষয়। তাকে শুধু মাঠেই অধিনায়কত্ব করতে হবে তা নয়। মাঠের বাইরেও তার দায়িত্ব থাকবে। তাকে ওই সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।’

দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়কত্বে আগ্রহ আছে লিটনেরও, ‘হ্যাঁ অবশ্যই বিসিবি সুযোগ দিলে আবারও এ কাজ (অধিনায়কত্ব) করবো। তবে আমি খুশি। তারা আমাকে সুযোগটি দিয়েছে।’

 

শুধু অধিনায়কত্বের পদ পেলেই হবে না, দলকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন‌্য সতীর্থদের সম্মান অর্জনও জরুরি বলে মনে করছেন ফাহিম, ‘আমার মনে হয় খেলোয়াড়দের সম্মান অর্জন করা জরুরি। সেটাও সে করতে পারবে আমার বিশ্বাস। তবে তার পারফরম‌্যান্সের কারণেই ওই কাজটা তার জন‌্য সহজ হবে। ও কিন্তু অধিনায়কত্ব করতে করতে বড় হয়নি। অধিনায়কের অধীনে খেলে বড় হয়েছে। অধিনায়কেরা কে কী করে সেগুলো দেখেছে। এতে হবে কী, সে আরও পরিপক্ব হয়ে উঠবে কাকে কীভাবে কোথায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ ভুল করলে ও প্রতিক্রিয়াটা দেখায় না। এসব কারণেই হয়তো টিম মেম্বাররা তাকে ওই সম্মানটা দেবে। ওর ওই চারিত্রিক বৈশিষ্ট‌্য আছে যে নিজে খারাপ করলে সেটাকে সে গ্রহণ করতে পারে। সেটা সে অন‌্যদের সঙ্গেও করবে। তাতে দলে ওর অবস্থানকে আরও শক্ত করবে।’