রমজান মাসের শুরুতেই বরিশালে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে সপ্তাহের ব্যবধানে বরিশাল শহরের বাজারগুলোতে গরুর মাংস কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। সেই সঙ্গে দেশি মুরগির দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা। আর সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০-৫০ টাকা। এমনকি গত এক পক্ষকালের ব্যবধানে কয়েক দফা বেড়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু , মুগ, খেসারি, ছোলা, মসুর ডাল চিড়া, শুকনা মরিচসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর চিনির মূল্য বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন টাকা। এতে ক্রেতা সাধারণ বাজারে এসে হিমশিম খাচ্ছে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২৩ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু বরিশালের বাজারে তার তেমন কোনো প্রভাব নেই। বরং নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিটি জিনিসের মূল্য যেন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
বরিশাল শহরের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, ১৫ দিন আগে বাজারে চিনি, আলু, দেশি-বিদেশি রসুন, চাল, মুগডাল, সয়াবিন তেলের দাম এক দফা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মে মাসের প্রথম সপ্তাহের ৫২ টাকার চিনি এখন ৫৬ টাকা, ১৪ টাকার আলু এখন ২০ টাকা, দেশি রসুন ৭৫ টাকার স্থলে ৮৫ টাকা, বিদেশি রসুন ১১০ টাকার স্থলে ১২০ টাকা। ছোলা ৬০ টাকার স্থলে এখন মানভেদে ৭০-৮০ টাকা, মুগডাল ৯৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১০, ৫৪ টাকার খেসারি এখন ৫৮-৬০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ২৪ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা।
মুরগির বাজারও চড়া। দেশি মুরগি ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩০-৫৪০ টাকা, সোনালি মুরগি ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংসের মূল্য ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকার স্থলে এখন ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজান মাসের শুরুতেই নিত্যপণ্যের বাজারে দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের।
বরিশাল শহরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেনের ভাষ্য হচ্ছে- বাজারে নিত্যপণ্যের যে মূল্য যেভাবে বাড়ছে তাতে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে গরু, মুরগির মাংসের মূল্য সম্পূর্ণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তবে এই বাজারের ব্যবসায়ী হারুন হাওলাদার সময়ের আলোকে বলেন, এবারের রমজান উপলক্ষে বাজার দর কিছুটা বাড়তির দিকে। পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় এমন পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মূলত বাজারে দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২৩ এপ্রিল থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বরিশালে পণ্য বিক্রি শুরু করে। কিন্তু বরিশাল নগরীতে পাঁচটি ও ঝালকাঠি জেলায় দুটি ট্রাকে পণ্য বিক্রি হলেও বাকি কোনো জেলা-উপজেলার ডিলার পণ্য উত্তোলন করেননি।
বরিশাল জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান বলছেন, বরিশাল শহরের বাজার মনিটরিংয়ে তাদের অন্তত ৩-৪ টিম কাজ করে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলাতেও নির্বাহী অফিসার দিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। যদি কোনো ব্যবসায়ী বিনা কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।