রোগীর জরায়ু কেটে ফেলায় অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার তালুকদারের বিরুদ্ধে সিজার করতে গিয়ে রোগীর জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ উঠছে।

বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই নারীকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ক্রমাগত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। মাহিনুরের ২৮ দিনের শিশু সন্তানটিও মায়ের সঙ্গে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।

রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী মাহিনুর বেগম (২৩) বেতাগী পৌরসভার ২ নম্বর নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী ও কাঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামের মৃত শাহজাহানের মেয়ে।

আজ বুধবার মাহিনুরের মা রুনু বেগম সাংবাদিকদের কাছে ভুল চিকিৎসার বর্ণনা দেন এবং ডাক্তার তাপস কুমার তালুকদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

মাহিনুরের স্বামী নিজাম উদ্দিন জানান, ‘আমার স্ত্রী মাহিনুরের প্রসব ব্যাথা দেখা দিলে গত ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ কাঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (আমুয়া) নেওয়া হয়।

সেখানকার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার তালুকদার রোগীকে হাসপাতাল সংলগ্ন আমুয়া অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

ক্লিনিকে ডাক্তার তাপস নিজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। সিজার করতে গিয়ে ভুলবশত মাহিনুরের জরায়ু কেটে ফেলেন।

রোগী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিলে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ ডা. তাপস ক্লিনিক থেকে মাহিনুরের নাম কেটে দিয়ে অন্যত্র চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

কিন্তু কোন ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। উল্টো ডাক্তার তাপস ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মাহিনুরের স্বজনদের বিষয়টি সাংবাদিক কিংবা প্রশাসনের লোকদের না জানানোর জন্য শাসিয়ে দেন।’

ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, ‘ডাক্তার তাপস আমাদের কাছে প্রথমে ভুল চিকিৎসার কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার ভুল হয়েছে; আপনারা আমাকে মামলাও দিতে পারেন বা মারও দিতে পারেন। এখন কী করবেন? ক্রমাগত রোগীর অবস্থা অবনতি হতে থাকায় ডাক্তার তাপসের বুলি পাল্টে যায়; তিনি চিকিৎসার সকল কাগজপত্র আটকে দেন এবং জরায়ু কেটে ফেলার কথা অস্বীকার করেন।’

এদিকে মাহিনুরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁর স্বামীর বাড়ি বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দিলে গত রোববার (০২ জানুয়ারি ২০২২) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আরও বলেন, ডাক্তার জানিয়েছেন—রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন, মাহিনুরের সিজার ও কেটে ফেলা জরায়ুর স্থানে পঁচন ধরেছে।

আজ ৬ জানুয়ারি ২০২২ ঢাকা সেন্টার হাসপাতাল চিকিৎসকরা তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে পুনরায় তাঁর অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন।

মাহিনুরের মা রুনু বেগম জানান, ‘ডা. তাপস কুমার তালুকদার সিজার করার জন্য আমাদের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা নিয়েছে। সিজারের পূর্বে ডাক্তার তাপস বলেছিলেন ১৬ হাজার টাকা লাগবে। ভুল চিকিৎসা করে জরায়ু কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে ৩৬ হাজার টাকা দাবি করেন।

আমরা ৩৬ হাজার টাকাই পরিশোধ করেছি। কাঠালিয়া ব্লাড ব্যাংকের পরিচালক তুহিন সিকদারের মাধ্যমে ১১ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছি, সব মিলিয়ে ওই দিন আমার মেয়েকে ১৭ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল।

আমার মেয়ে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঢাকায় চিকিৎসা রয়েছেন। আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, তাই মামলা করতে পারিনি। আমরা গরীব এ জন্য মামলা করতে সাহস পাইনি। আমি ডাক্তার তাপসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ন্যায় বিচারের দাবি করছি।’

এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সামাজিক আন্দোলন কাঠালিয়ার সভাপতি মো. তুহিন সিকদার বলেন, ‘আমাদের সহযোগী সংগঠন ব্লাড ব্যাংক কাঠালিয়ার মাধ্যমে ওই মহিলাকে ১১ ব্যাগ ব্লাডের ব্যবস্থা করে দিয়েছি এবং আমি নিজেও ব্লাড দিয়েছি। আমি যখন ব্লাড দিতে গিয়েছি তখন ওখানের সবাইকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছিল। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার তালুকদার বলেন, ‘পূর্বে তাঁর সিজার করা থাকায় ফুলটা পজিশনে ছিল না এবং জরায়ুর মধ্যে একটা টিউমার ছিল। এটা অপারেশন করতে গেলে খুব ব্লিডিং হয়। এটা আগে আলট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়েনি।

অপারেশন করে বাচ্চা বের করার পরে যখন ফুলটা জরায়ু থেকে আলাদা করতে হয় তখন ফুলটা জরায়ুর মধ্যে ঢুকে থাকে। ওটা ছাড়ালেও ব্লিডিং হয় এবং না ছাড়ালেও ব্লিডিং হয়। না ছাড়ালে ফুলটা থেকে গেলে প্রচুর ব্লিডিং হয়। সেই মুহূর্তে জরায়ুর পার্সিয়ালী কিছু অংশ কেটে ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সেটা তখন করতে হয়েছে।