রাজধানীর উদ্দেশ্যে বরিশাল ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ঈদের চতুর্থ দিনে বরিশাল নদী বন্দরে কর্মে ফেরা যাত্রীদের ভির দ্বিগুন বেড়েছে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই প্রতিটি লঞ্চের ডেক কানায় কানায় পূর্ণ হয়। জায়গা না পেয়ে কর্মস্থলমুখো যাত্রীদের কোন রকম বসার জায়গা খুঁজে নিতে হয়েছে কেবিনের ও লঞ্চের সামনে। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েও গন্তব্যে যাত্রা করেন তারা।

এদিকে বরিশাল নৌ বন্দরে কর্মে ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে পন্টুন সংকট ও যাত্রী ছাউনি। পর্যাপ্ত পন্টুন না থাকায় এক লঞ্চের মধ্যে থেকে পৌছতে হচ্ছে মাঝ নদীতে বার্দিং করা লঞ্চে। আবার যাত্রী ছাউনি থাকলেও নেই বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা। চেয়ারের যে ব্যবস্থা ছিলো তা যাত্রী ছাউনি থেকে উধাও হয়ে গেছে। ফলে লঞ্চের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখাগেছে, স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ শেষে কর্মে ফেরার যুদ্ধে সামিল হয়েছে লাখ লাখ যাত্রী। যার বেশিরভাগ মানুষ লঞ্চের যাত্রী হয়ে গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় শনিবার (০৮ জুন) বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রীদের ভির দ্বিগুন ছিলো।

বরিশাল নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. কবির হোসেন জানান, শনিবার সকাল থেকেই নদী বন্দরে যাত্রীদের ভির বাড়তে থাকে। তাই চতুর্থ দিনে বিশেষ সার্ভিসের সংখ্যা বেড়ে ১৫টি হয়। যা শনিবার রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আর সন্ধ্যা হতেই লঞ্চগুলো যাত্রীতে ভরে যায়।

এর আগে দুপুর পৌনে তিনটা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে দিবা সার্ভিসের তিনটি ওয়াটার বাস কর্মে ফেরা যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। ভায়া রুটের আরো ৪টি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

বরিশাল নৌ বন্দরে লঞ্চগুলোর ডেকে যাত্রীদের ভির-বিএসএল নিউজ।

বেসরকারি নৌ যানের পাশাপাশি রাষ্ট্রিয় নৌযান সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি’র একটি বিশেষ সার্ভিস সহ দুটি স্টিমার বিশেষ সার্ভিস দিচ্ছে। এর মধ্যে একটি সরাসরি বরিশাল থেকে ঢাকা এবং অপরটি ভায়া বরিশাল হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। সরকারি এবং বেসরকারি সব লঞ্চেই ভির পূর্বের তুলনায় বেশি।

সরেজমিনে দেখাগেছে, বরিশাল নদী বন্দরে পন্টুন সংকট অনেক আগে থেকেই। এখানকার ছটি পন্টুনের মধ্যে তিনটি পন্টুন ঢাকা-বরিশাল রুটের ২৩টি এবং ভায়া লঞ্চের জন্য নির্ধারিত। এ কারনে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কেননা শনিবার যে ১৫টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সেগুলোর মধ্যে ১০টি লঞ্চ পন্টুনে বার্দিং এর সুযোগ পেয়েছে। বাকি ৫টি লঞ্চ মাঝ নদীতে একটির পেছনে আরেকটি বার্দি করা। এক লঞ্চের মধ্যে থেকে পেছনের লঞ্চে ঝুঁকি নিয়ে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের।

বরিশাল সদর নৌ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের থেকে চতুর্থ দিন শুক্রবার একটু ভির বেড়েছে। তবে তা তুলনামুলক নয়। সোমবার ভির আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, কর্মে ফেরা যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ বন্দরে নৌ পুলিশের পাশাপাশি, মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পাশাপাশি যাত্রীদের সহযোগিতা ও বন্দরের শৃঙ্খলা রক্ষায় ক্যাডেট ও স্কাউট সদস্যরা রয়েছে।

এদিকে বরিশাল নৌ বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ঈদের পর দিন থেকেই কর্মে ফেরা মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৬ জুন বরিশাল থেকে ৬টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আর চতুর্থ দিন ছেড়ে যাচ্ছে এক সাথে ১৫টি। তবে যাত্রীদের চাপ গত ঈদের মত নেই।

আজমল হুদা মিঠু বলেন, ঈদ উপলক্ষে নৌ বন্দরে বিআইডব্লিউটিএ ১৪ দিন ব্যাপি সেবাপক্য পালন হচ্ছে। যার কারনে বন্দরে কোন ভোগান্তি নেই। ভোগান্তি একটাই, তা হলো পন্টুন সংকট। পন্টুনের অভাবে একটি লঞ্চের পেছনে অরেকটি লঞ্চ বার্দিং করতে হচ্ছে। যাত্রীরাও এক লঞ্চ থেকে ঝুঁকি নিয়ে অপর লঞ্চে উঠছে।

তিনি বলেন, ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের জন্য যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করেছি। সেখানে এক সাথে পাঁচ শতাধিক যাত্রী অবস্থান করতে পারবে। করা হয়েছে বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা। কিন্তু যাত্রী ছাউনিতে থাকা বেশ কিছু চেয়ার উধাও হয়ে গেছে। গত দু’দিন যাত্রী চাপ কম থাকায় তা বুঝতে পারিনি। শনিবার যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় চেয়ার উধাও হয়ে যাবার বিষয়টি ধরা পড়ে। এখন যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তাই আরো কিছু চেয়ারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।