মালদ্বীপে অবৈধ প্রবাসীদের ভাগ্য নির্ধারণ প্রধানমন্ত্রীর সফরে!

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন মালদ্বীপ সফরে অর্ধলাখ অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান।

তিনি বলেছেন, দেশটিতে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা কমবেশি এক লাখ। মালদ্বীপ সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে তাদের মধ্যে ৫০ হাজার প্রবাসীই অনিয়মিত (অবৈধ) হয়ে গেছেন। এ অনিয়মিত প্রবাসী কর্মীদের নিয়মিত করার জন্য হাইকমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট মিনিস্ট্রি অব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ ও বৈঠক হচ্ছে।

হাইকমিশনার নাজমুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন মালদ্বীপ সফরকালে অনিয়মিত শ্রমিকদের নিয়মিত করার ব্যাপারটি অন্যতম এজেন্ডা থাকবে। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ দুই দেশের সরকারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিয়মিত করা অর্থাৎ ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী খুব শিগগির মালদ্বীপ আসবেন তবে দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার কার্যালয়ে সফররত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার নাজমুল হাসান জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় মালদ্বীপ। আর যারা অনিয়মিত রয়েছেন তাদের নিয়মিত করতে এদেশের সরকার একটি সুযোগ দেয়। তখন ৪০ হাজার অনিয়মিত প্রবাসী কর্মী রেজিস্ট্রেশন করেন। ওই সময় রেজিস্ট্রেশন করলে ধরে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় আরও ২০ হাজার রেজিস্ট্রেশনই করেননি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরকালে প্রধান এজেন্ডা থাকবে মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন। দ্বিতীয়ত, মালদ্বীপে যারা অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন তাদের নিয়মিতকরণ। তৃতীয়ত, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে অদক্ষ কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে সাময়িক যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত থাকার বিষয়টি প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হবে। দুই দেশের কানেকটিভিটি অর্থাৎ যোগাযোগের ক্ষেত্র (আকাশ ও জলপথে) সম্প্রসারণের বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে।

হাইকমিশনার বলেন, মালদ্বীপে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্য দেশের চেয়ে এদেশে নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি।

হাইকমিশনারের প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। তিনি বলেন, পর্যটননির্ভর মালদ্বীপের ৭০ শতাংশ পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হলে বাংলাদেশকেই পণ্যবাহী জাহাজ চালু করতে হবে। মাসে অন্তত এক থেকে দুইবার এলে মালদ্বীপের ব্যবসায়ীদের অনেকে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আনতে পারবেন।

হাইকমিশনার নাজমুল হাসান বলেন, মালদ্বীপে বাংলাদেশিরা সরাসরি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না। বৈবাহিক সূত্রে কিংবা মালদ্বীপিয়ান কোনো মালিকের নামে ব্যবসা খুলে নিজে চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। এ দুটি উপায়ে কিছু পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি হলেও এর পরিমাণ যথেষ্ট কম। মালদ্বীপ জাহাজ পাঠাবে না, কারণ বাংলাদেশে টুনা ফিস ছাড়া তাদের আমদানি করার মতো আর কোনো পণ্য নেই।

তিনি বলেন, ভৌগলিকভাবে ভারত ও শ্রীলংকা মালদ্বীপের কাছাকাছি রাষ্ট্র। ফলে এ দুটি দেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে খরচ অনেক কম পড়ে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে হয় সিঙ্গাপুর থেকে ফিডার ভ্যাসেলের মাধ্যমে অথবা শ্রীলংকার কলম্বো হয়ে আসে।

হাইকমিশনার আরও বলেন, করোনাকালে কলম্বোতে এমনই পরিবহন জট ছিল যে সেখানে পণ্য এক থেকে দেড় মাস পড়েছিল। ফলে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

তিনি জানান, মালদ্বীপের পতাকাবাহী জাহাজ মাত্র একটি। তারা ভারতের নিকটস্থ একটি বন্দরের সঙ্গে মাসে একবার যাতায়াত করে। তাদের পক্ষে বাংলাদেশ জাহাজ পাঠানো সম্ভব না।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, মালদ্বীপের জেলখানায় প্রায় ১০০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন। তাদের মেধ্য ৭০ জন মাদক ও শিশু নির্যাতনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি পর্যায়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স মালদ্বীপে সরাসরি ফ্লাইট চালু করায় তিনি তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সরাসরি মালদ্বীপে চালু করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্যদের অনুরোধ জানালেও সরকারিভাবে ফ্লাইট চালু হয়নি। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নিজে মালদ্বীপে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে জানালেও তা হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।