সাহস করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘জনগণ সজাগ দৃষ্টি রাখবে যাতে কেউ ভোটের আগের রাতে ভোট দিতে না পারে, জাল ভোট দিতে না পারে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভোটারদের ভীতসন্ত্রস্ত কিংবা ভোটগ্রহণ বিলম্বিত করতে না পারে।’
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
জনগণ ভোট দিতে পারলে ঐক্যফ্রন্ট বিজয়ী হবে উল্লেখ করে প্রার্থী ও এজেন্টদের উদ্দেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণ এবং সাহসিকতার সঙ্গে এ নির্বাচনে অংশহগ্রহণ করবেন। কেন্দ্রীয় অফিসের সঙ্গে আপনারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন এবং সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। এজেন্টদেরও সাহসি হতে হবে। ভোটগ্রহণের আগে দেখে নেবেন ভোটের বাক্স খালি আছে কিনা? আর ভোটগ্রহণ শেষে, ভোট গণনা করে কে কত ভোট পেল সেটি নিশ্চিত না হয়ে কোনো সাদা কাগজে সই করবেন না। কোনো অবস্থাতেই প্রিসাইডিং অফিসারের সই ছাড়া সই করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করা হবে আমাদের পরাজিত করতে। কিন্তু নেতাকর্মী ও জনগণ তৎপর থাকলে সেটা সফল হবে না। আমরা আশা করব, সবাই সাহস করে ভোটকেন্দ্রে যাবেন নিজের ভোট নিজে দেবেন।’
বিএনপিকে প্রার্থীশূন্য করে বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সরকারকে ৩২টি আসন উপহার দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এ নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ১৬ জন প্রার্থী কারাগারে রয়েছেন এবং ১৬ জন প্রার্থীকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কৌশলে এ আসনগুলো সরকারকে উপহার দেয়া হয়েছে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আর একদিন পরেই বহু প্রতীক্ষিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমরা আশা করেছিলাম, এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিন্তু সে পরিবেশ নেই। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি সবাই পদে থেকে নির্বাচন করছেন আর আমরা নাগরিক হিসেবে নির্বাচন করছি। এ নির্বাচনের তফসিল পুরোপুরি অসমতল। তারপরও আমরা এ অসমতল মাঠে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আশা ছিল নির্বাচনের আগে ইসি ভোট সুষ্ঠু করতে পদক্ষেপ নেবে কিন্তু তারা সেটি করেনি। এমনকি ভোটে অংশ নেয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা দেখা করেছিলাম। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভোটের সময় সবার সমান সুযোগ তৈরি করবেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেন না, সুষ্ঠু ভোট হবে। কিন্তু তিনি যা বলেছিলেন সেগুলোর কোনোটাই তিনি রাখেননি।’
সারাদেশে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একটু আগে গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা হয়েছে, তিনি গুরুতর আহত। নিতাই রায় চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর ঐক্যফ্রন্টের ১০ হাজারের ওপর নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক প্রার্থীও আছেন৷ হামলায় আহত হয়েছে ১৩ হাজার নেতাকর্মী।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘এখনও সরাকরি দল পুলিশ প্রহরায় প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ এটি নিবাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এমনকি শোনা যাচ্ছে, আজ বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সরকার প্রধানের একটা অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচার করা হবে। এছাড়া একটি টিভি চ্যানেল প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের একটা বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচার করবে, যা নির্বাচনী আচণবিধির লঙ্ঘন। এ দেশে আইন যারা বানিয়েছে তারাই নিয়মিত আইন লঙ্ঘন করছেন। দেশবাসী আশা করেছিল, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তাও হয়নি। উল্টো আমাদের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের ওপর হামলা-নির্যাতন বেড়ে গেছে৷ আমরা ভোটারদের নিরাপত্তা ও নিবাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা আবারও দাবি করছি সেনাবাহিনীকে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেয়া হোক। যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারে।’
ভোটেরদিন গুলশান কার্যালয় থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে নিয়মিত ব্রিফ করা হবে জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে বিদেশিদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যভাবেও আমাদের মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্তরা যোগাযোগ রাখবেন। নির্বাচন কমিশনেও আমাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকবে।’
প্রার্থীশূন্য আসনগুলোতে বিএনপির সমর্থন কারা পাচ্ছেন জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সব আসনের কথা বলতে পারব না। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। স্থানীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী বা সরকারবিরোধী কোনো দলের প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান প্রমুখ।