ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ‘স্বেচ্ছামৃত্যুর’ স্বীকৃতি

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

ভারতে নিরাময় অযোগ্য রোগের ক্ষেত্রে ‘স্বেচ্ছামৃত্যুর’ স্বীকৃতি দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে ‘লাইফ সাপোর্ট’ নিয়ে বাঁচতে চান না মর্মে নাগরিকদের উইল করারও অনুমতি দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একে ‘লিভিং উইল’ অভিধা দিয়েছে আদালত।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘কমন কজ’ নামের একটি এনজিওর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কে, কীভাবে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনুমোদন দিতে পারবে সে ব্যপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনার পাশাপাশি তা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলেছে আদালত।

পিটিশনে বলা হয়, একজন ব্যক্তির নিজের শরীরের ওপর অত্যাচার প্রতিরোধের অধিকার নেই, একথা আপনি কীভাবে বলতে পারেন? বেঁচে থাকার অধিকারের মধ্যেই সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুর অধিকারও অন্তর্নিহিত। যন্ত্রের সাহায্যে (ভেন্টিলেশন) কাউকে বেঁচে থাকতে বাধ্য করা যায় না। একজন ব্যক্তিকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার মানে হলো তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অর্থাৎ জোর করে বাঁচতে বাধ্য করা।

শুক্রবার ওই পিটিশন নিয়ে রায়ের শুরুতে বলা হয়, মানুষের সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুরও অধিকার আছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিচারপতিরা চার ধরনের মতামত দিয়েছেন। তবে ‘লিভিং উইল’-এর অনুমতি দেওয়া উচিত বলে তারা সবাই একমত হয়েছেন।

রায়ে বলা হয়েছে, ‘যদি ভবিষ্যতে কোমায় চলে গেলে কেউ আর বেঁচে না থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তবে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তার জীবন টেনে নেওয়া উচিত না বলে আমাদের মত।’ কোমায় চলে যাওয়ার পর কোনো রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে কি-না সে বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও রায়ে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আর যদি কোনো রোগী ‘লিভিং উইল’ করে না যান ও চিকিৎসকরা তার অসুস্থতা নিরাময় অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন; কিন্তু রোগী নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত অবস্থায় না থাকেন তবে তার কোনো স্বজন উচ্চ আদালতে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়ার আবেদন করতে পারবেন। ওই আবেদনের ভিত্তিতে আদালত মেডিকেল বোর্ডকে তলব করে স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে নিশ্চিত হবে।

অরুণা শানবাগের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনটি ছিল ভারতে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। ১৯৭৩ সালে ধর্ষণের শিকার ওই নারী কোমায় চলে যান এবং ৪২ বছর পর ২০১৫ সালে তার মৃত্যু হয়। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট অরুণাকে জোর করে খাওয়ানো বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় আত্মহত্যার চেষ্টার সাজা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বলা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি ও জি নিউজ