বাবা-মায়ের বিয়েতে বরযাত্রী সন্তানরা, নাচলেন নাতি-নাতনিরা

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বাবার বিয়েতে বরযাত্রী হলেন সন্তানরা। একই সঙ্গে বিয়েতে নেচে, গেয়ে আনন্দ করেছেন নাতি-নাতনিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। ঠিক এইরকম এক ঘটনার সাক্ষী হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ থানার বেলিয়াপুকুর এলাকার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, বাংলা ফাল্গুন মাসের ৩ তারিখ, ১৩৫৯ সালে রাজ্যের ভগবানগোলা থানার বামুনিয়া গ্রামের বিশ্বনাথ সরকারের সঙ্গে রঘুনাথগঞ্জ থানার ফেজালপুর এলাকার সুরোধনি সরকারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের কেটে গেছে বহু সময়। একসঙ্গে কাটিয়েছেন বহু বসন্ত। তাছাড়া বিয়ের ৭০তম বিবাহবার্ষিকীও পালন করছেন এ দম্পতি।

বিশ্বনাথ সরকার ও সুরোধনী সরকারের ছয় ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে সংসার। এরই মধ্যে বিয়ে হয়ে হয়েছে সব ছেলে মেয়ের। কথায় আছে বিয়ের পর ছেলে মেয়েরা বাবা-মাকে ভুলে যায়। কিন্তু সে কথা যে ভুল, তা প্রমাণ করে দিলো বিশ্বনাথ সরকার ও সুরোধনী সরকারের ছেলে-মেয়েরা। কাজের সূত্রে সবাই এখন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু ছেলে মেয়েরা ভোলেনি তাদের বাবা মায়ের বিবাহবার্ষিকী।

বাবা-মাকে তাদের বিবাহবার্ষিকী স্মরণ করিয়ে রাখতে এই দিনেই আবারও নতুন করে বাবা-মায়ের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন ছেলে মেয়েরা। নিয়ম করে একদিকে বাবার গ্রামের বাড়ি ভগবানগোলা থানার বামুনিয়া গ্রামে মাকে রেখে আসা হয়। অন্যদিকে বাবাকে বর সাজিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে বসিয়ে মাকে আনতে হাজির হন ছেলে মেয়েরা।

সুরোধনী সরকারও রীতিমতো নতুন হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ি পরে মাথায় টোপর দিয়ে বউ সেজে অপেক্ষা করছেন বরের জন্য। ধুমধাম করে বাবা-মায়ের বিয়ে দিলেন ছেলে মেয়েরা। প্রায় সাতশ অতিথি আমন্ত্রণ জানিয়ে বিয়ে দিলেন বাবা মায়ের।

বিশ্বনাথ সরকারের চতুর্থ ছেলে বলেন, আমি কাজের সূত্রে দিল্লিতে পরিবারসহ থাকি। একদিন হঠাৎ করে রাত্রে ঘরে ফিরলে আমার স্ত্রী আমাকে বলেন বাবা মায়ের আবার নতুন করে বিয়ে দেওয়ার কথা। প্রথমে শুনে একটু কেমন লাগলেও পরে আমার বাকি ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বললে তারাও রাজি হয়ে যায়।

বিশ্বনাথ সরকারের বউ গীতা সরকার বলেন, বর্তমান সময়ে এইভাবে কোনো দম্পতি একসঙ্গে ৭০ বছর কাটাচ্ছে এইরকম খুব কম দেখা যায়। এখন বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে, অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয়েও যাচ্ছে। তাই এই সম্পর্ক বর্তমান সমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

পায়েল সরকার বলেন, আমি খুব আনন্দিত। কারণ ঠাকুরমা ও ঠাকুরদাদার বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে যেতে পারছি। তাছাড়া নিজের হাতে ঠাকুরমাকে সাজিয়েও দিতে পেরেছি।

অপরদিকে বিশ্বনাথ সরকার ও সুরোধনী সরকারের নাতী জামাই সমর মণ্ডল নতুনভাবে বিয়ে হওয়াতে খুব খুশি।