বরিশাল চরমোনাই মাটির নিচ থেকে গজিয়ে ওঠা কানা মসজিদ নিয়ে রহস্য !

:
: ৬ years ago

বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চরহোগলা তালুকদার বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় রহস্যে ঘেরা একটি ছোট গম্বুজের উপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল একটি লাহর গাছ। স্থানীয়দের ধারণা, এটি একটি গায়েবী মসজিদ। কেউ কেউ আবার এটিকে কানা মসজিদ বলেও আখ্যায়িত করেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, বহু বছর পূর্বে মাটির নিচ থেকে একটি গম্বুজ ওঠে। গম্বুজের উপরে বট গাছ আকৃতির একটি গাছ রয়েছে। আর ঐ গাছের শিকড় দিয়ে ঘেরা রয়েছে গম্বুজটি। গাছটির নাম দেয়া হয়েছে লাহর গাছ। যার পাতাটির মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে। অদ্ভুদ এই গাছের পাতাটি বিড়ল প্রজাতির।

স্থানীয় কোন মানুষ ঐ গাছের পাতা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেনা। কেউ যদি গাছের পাতায় আগুন দেয় তাহলে তার কোন না কোন সমস্যা ও দুর্ঘটনা ঘটে বলে বিশ্বাস স্থানীয়দের। এমনকি ঐ গাছের ডাল কাটলে দুর্ঘটনা ঘটবেই বলে সাধারন মানুষের ধারণা। তবে এই বিশ্বাস পুরো চরহোগলা ইউনিয়নবাসীর।

তারা বলছে, বেশ কয়েকবার কয়েকজন ব্যক্তি লাহর গাছের ডাল কাটে। তার পরই তাদের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। বিভিন্ন সময়ে এলাকার সাধারন মানুষ ঐ স্থানটির সামনে দিয়ে যেতে ভয় পায়। অনেকেই গভীর রাতে সাদা পোষাকে কাউকে নামাজ পড়তেও দেখেছে।

গায়েবী নামক এই মসজিদটিতে একটি গম্বুজ রয়েছে। প্রবেশ পথে রয়েছে ছোট একটি দরজা। উত্তর দিকে একটি ছোট জানালা। ভেতরে দুই থেকে তিন জন মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। প্রবেশ পথের সামনেই একটি দান বাক্স রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে এখানে দান করে থাকেন।

জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে থাকা এই গায়েবী নামক মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন চরহোগলা ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়ীর মোতাহার হোসেন চৌধুরী (৭৬)। তিনি জানান, তার জন্মের পর থেকেই তিনি স্থানীয়দের দেয়া নাম (গায়েবী মসজিদ) দেখে আসছেন। তবে তার মতে এটি কোন গায়েবী সমজিদ না।

রেকর্ডীয় প্রায় ২১ শতাংশ জমিতে নাম দেয়া আছে মসজিদ বাড়ী। তবে বাস্তবে রয়েছে ৯ শতাংশ। তিনি জানান, এখানে এটি মাটি ভেদ করে উঠেছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমার জানা মতে, বিরাট নগরের শাসক দরবেশ শাহ্ সিকান্দারের পুত্র গাজী। কালু সিকান্দারের পোষ্য পুত্র।

তিনি এখানে এ ধরনের কিছু একটা তৈরী করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে আমি পুরোপুরি জানিনা। আমার বাপ দাদারাও এভাবেই দেখে আসছে। এটি বহু বছরের পুরোনো। তবে এটা সত্যি এখানে কিছু একটা আছে। অনেকে অনেক কিছু দেখেছে।

অনেকে ভক্তি করে এখানে মুরগী, ছাগল, টাকা, পয়সা দিয়ে যায়। মোতাহার হোসেন চৌধুরী জানান, একই এলাকার ইমাম শামসু তালুকদার লাহর গাছের ডাল কাটে তার কিছু দিন পরই তিনি মারা যান। আর একজন হাফেজ আবুল কালাম ডাল কাটে। এর সাত দিনের মাথায় তিনি প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন।

এখানের একটি পাতাও কেউ পুড়ে না। সব পাতা জমে করে পাশের একটি গর্তে ফেলে দেয়া হয়। বছর শেষে দান বাক্স খুললে অনেক টাকা পাওয়া যায়। আর সেই টাকা দিয়ে এটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। একটা নতুন দান বাক্স বসানো হয়েছে।

মানুষ রাতের বেলা এখান থেকে হেঁটে যেতে ভয় পায় তাই লাইট পোষ্ট দিয়ে লাইট দেয়া হয়েছে। জ্বীন আছে এটা সত্য কথা আবার অনেকে দেখেছে বলেও জানান মোতাহার হোসেন চৌধুরী।

স্থানীয় মোশারফ আলী (৮৩ ) জানান, এখানে মাঝে মধ্যে মানুষ নামাজ পড়ে। আগে তো সবাই ভয়ে যেতে পেতো না, এখন আর কেউ ভয় পায়না। অনেকেই আসে এখানে। এখান থেকে উপকার পায় বলেই মানুষ আসে। তবে এখানে আসলে কি আছে তা বলতে পারবো না। প্রতি বছর দানের টাকায় গোস্ত ছাড়া খিচুরী পাক করে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিলি করা হয়।