অনলাইন ডেস্ক :: বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা আর স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে বরিশালে প্রস্তাবিত ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন প্রকল্পটি গত দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে চরম অনিশ্চয়তার কবলে রয়েছে।
অথচ এ ধরনের একটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপিত হলে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের কমপক্ষে দশ লাখ গ্রাহকের কাছে মানসম্মত পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হতো। প্রকল্পটির জন্য বিদ্যমান বরিশাল গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশন সংলগ্ন সরকারী খাস জমিসহ বেসরকারী জমি অধিগ্রহনের ছাড়পত্র প্রদান করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও পিডিবির স্থানীয় পর্যায় থেকে কয়েক দফা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়ার পরেও কোন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তবে বরিশালে বিভাগীয় কমিশনার রামচন্দ্র দাসের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবাহল নন বলে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পিডিবি ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারনের আশ্বাস দিয়েছেন।
সূত্রমতে, জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবারহ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশালে ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বরিশালে বিদ্যমান গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশন সংলগ্ন প্রয়োজনীয় জমি হুকুম দখল করা সংক্রান্ত জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র প্রদানের অনুরোধ করে। কিন্তু ওই জমি ঝালকাঠী জেলার নলছিটি উপজেলার আওতাভুক্ত।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশন কর্তৃপক্ষ ঝালকাঠীর জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিলেও অনেক বিলম্ব করে নলছিটি উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার কথা বলে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। অনেক কাঠখড় পেরিয়ে উপজেলা প্রশাসন বিদ্যমান পাওয়ার স্টেশনের সাথে প্রায় ১৬ একর জমি পাওয়া যেতে পারে বলে জেলা প্রশাসনকে জানায়। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে বিষয়টি নিয়ে পিডিবি বা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে ইতিবাচক কিছু জানানো হয়নি।
অথচ ওই এলাকায় ইতঃপূর্বে একটি বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রায় শত একর এবং অপর একটি বেসরকারী পাওয়ার স্টেশনকেও প্রায় ৩০ একর জমি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সরকারীভাবে জমির ব্যবস্থা করতে বলা হলেও বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে আটকা পরে রয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বর্তমানে বরিশাল গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশনে ১৮.৪০ একর জমির ওপর বিদ্যমান ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি পাওয়র প্লান্টের প্রথমটি ১৯৮০ সালে স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ১৯৮৪ সালে চালু করা হয়। দ্বিতীয় ইউনিটটি ১৯৮৭ সালে চালু করা হয়। ২০ বছর আয়ুস্কালের এ দুটি উৎপাদন ইউনিট ইতোমধ্যে যথাক্রমে ৩৫ বছর ও ৩১ বছর বয়স অতিক্রম করেছে।
এসব উৎপাদন ইউনিট ক্ষমতার তিন-চতুর্থাংশের বেশি বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। ফলে উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ইউনিট অতি প্রয়োজনে সান্ধ্যকালীন পিক আওয়ার ছাড়া পরিচালনা করা হচ্ছেনা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যাও পিছু ছাড়ছে না। সূত্রগুলোর দাবি, প্রস্তাবিত বরিশাল ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টে ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি গ্যাস টার্বাইন ইউনিট থাকবে। যার দুটি টার্বাইনের আগুন থেকে তৃতীয় স্টিম টার্বাইনটি চলবে। ফলে এ পাওয়ার প্লান্টে উৎপাদন ব্যায় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পাবে।
বিগত দুই বছর আগে চীনা কারিগরি সহায়তায় ভোলা জেলায় ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশন চালু করা হয়। কিন্তু ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি ইউনিটই ক্ষমতার ১০% কম বিদ্যুৎ উপাদন করছে। ফলে ২২৫ মেগাওয়াটের স্থলে সেখান থেকে সর্বোচ্চ ১৯০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছেনা। ভোলায় একই ক্ষমতার আরও একটি পাওয়ার স্টেশন করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা আর বেশী দূর এগোয়নি।
দেশের বৃহৎ দ্বীপ জেলা ভোলা অত্যন্ত দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। এখানে বিপুল গ্যাসের মজুদ থাকায় সাগর পাড়ের ওই এলাকায় পাওয়ার স্টেশনের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনাকে এড়িয়ে চলা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই পিডিবি বরিশালে মাঝারি থেকে বড় পাওয়ার স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্দ গ্রহন করে। কিন্তু পুরো বিষয়টিই গত সোয়া দুই বছর ধরে অন্ধকারে হাতরিয়ে বেড়াচ্ছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক পিডিবির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, বরিশালের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা জরুরি।