বরিশালে পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করোনা ইউনিট চালু

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বরিশাল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০০ শয্যায় করোনা রোগীদের সংকুলান না হওয়ায় জেলা সদর হাসপাতালে নতুন করোনা ইউনিট চালু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ সোমবার থেকে সেখানে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ভবনটিকে ২২ শয্যার করোনা ইউনিট হিসেবে চালু করা হয়েছে।

চালুর পরপরই আজ সেখানে ১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি হাসপাতালের ৩ নম্বর ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের ১৭ মার্চ শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি নতুন ভবনে করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়।

শুরুতে শয্যা ছিল ৫০টি। গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যার সংখ্যা ২০০-তে উন্নীত করে কর্তৃপক্ষ। তবে গত বছরের ডিসেম্বর এবং চলতি বছর জানুয়ারির দিকে রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচে নেমে যায়।

চলতি বছরের মার্চের পর আবার করোনা ওয়ার্ডে বাড়তে থাকে রোগীর চাপ। এ কারণে শয্যার সংখ্যা ২৫০ করা হয়।

এতেও রোগীর সংকুলান না হওয়ায় গত সপ্তাহে আরও ৫০টি শয্যা বাড়িয়ে ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

আজ সকালে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ৩০৭ জন রোগী। তবে দুপুরের পর তা আরও বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের শয্যা নিতে হয় মেঝেতে।

এদিকে শয্যা বাড়ানো হলেও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সেবা রয়েছে ১০৩ জন রোগীর। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে ৬৯টি। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা রয়েছে ২২টি।

এই ২২টি আইসিইউ শয্যার সব কটিই মুমূর্ষু রোগীতে পূর্ণ। আরও অনেক রোগী আইসিইউর জন্য অপেক্ষমাণ আছেন। একই সঙ্গে অক্সিজেনের জন্য রোগীর স্বজনদের হাহাকার চলছে।

হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের একজন নার্স জানান, এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের ৩০০ শয্যা ৯০ শতাংশ রোগীতে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু গত শনিবার থেকে রোগীর চাপে সব শয্যা পূর্ণ হয়ে যায়।

এখন মেঝেতে রোগী রাখতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এখানে ভর্তি হওয়া এক-তৃতীয়াংশ রোগীরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৭০-এর নিচে। এই মুহূর্তে তাঁদের আইসিইউ প্রয়োজন হলেও মাত্র ২২টি আইসিইউর সব কটিতেই রোগী আছেন।

এই হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে আজ সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জন মারা গেছেন। এটিই এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা। সেই সঙ্গে এটি বিভাগে এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম আজ দুপুরে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সামর্থ্য থাকবে, রোগী ভর্তি নেওয়া হবে।

এক সপ্তাহ আগেই ১০০ শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে শয্যা বৃদ্ধি করে আরও রোগী ভর্তি নেওয়া হলে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিতে পারে।

তাই বরিশাল জেলা সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর জন্য আমরা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে সুপারিশ করেছিলাম।

সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে দ্রুত কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ আছে।’

এদিকে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। বিভাগে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এখন তারা চিকিৎসা সুবিধা, শয্যা, সামর্থ্য বাড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বিকেলে বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকায় জেলা সদর হাসপাতালে আজ থেকে নতুন করে করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। আপাতত সেখানে ২২টি শয্যা দিয়ে চালু হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ৫০ শয্যায় উন্নীত করা যাবে।