বরিশালে করোনা পরিস্থিতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টেলি স্বাস্থ্যসেবা

:
: ৪ years ago

শামীম আহমেদ ॥ করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যার সাথে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসা করতে গিয়ে করোনা জীবাণু চিকিৎসকদের দেহে সংক্রামিত হবার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো রোগের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা পরেছেন মহাদুশ্চিন্তায়। একইসাথে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও পরেছেন মহাবিপাকে।

 

এসব সমস্যা দূর করতে বরিশালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা শুরু করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। যাকে সহজ শব্দে অভিহিত করা হচ্ছে “টেলি স্বাস্থ্যসেবা” নামে। বিভিন্নরোগে আক্রান্ত মানুষ ও সাধারণ চিকিৎসকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই স্বাস্থ্য সেবা। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলেই পাওয়া যাচ্ছে চিকিৎসকদের পরামর্শ। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এই পন্থায় সেবা দিচ্ছেন রোগীদের। এছাড়া বর্তমান সময়োপযোগী এই পরিসেবার প্রায় সম্পূর্ণটাই রোগীরা পাচ্ছেন বিনামূল্যে।

 

সূত্রমতে, জেলায় সর্বপ্রথম টেলি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে করোনা সংক্রমণ রুখতে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। বন্ধের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো পর্যায়ের সদস্য যেন ঘরে বসে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে এ জন্যই এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এ কার্যক্রমের খবর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর সাধারণ মানুষদের অনেকেই নির্ধারিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে সেবা নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

এ ব্যাপারে ববি’র উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিন জানান, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে নির্দিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করলে আমাদের একজন ডাক্তার রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যদের জন্য এ কার্যক্রম শুরু হলেও বাইরে থেকেও অনেকে যোগাযোগ করছে। সবাইকেই চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ দেবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। করোনা সংকটের পুরোটা সময় এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) পক্ষ থেকেও টেলিমেডিসিন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ‘শেবাচিম স্বাস্থ্য বাতায়ন’ নামের এই কার্যক্রমে সাধারণ অসুস্থতা অনুভবকারী রোগীরা মোবাইল ফোনেই পাচ্ছেন চিকিৎসা পরামর্শ। যোগাযোগের জন্য দেওয়া হয়েছে সাতজন চিকিৎসকের নির্ধারিত ফোন নম্বর। দিনের যেকোনো মুহুর্তে মোবাইলে যোগাযোগ করলেই পাওয়া যাচ্ছে কাঙ্খিত চিকিৎসকের সেবা।

 

শেবাচিম আন্তঃবিভাগ চিকিৎসক পরিষদের নেত্রী ডাঃ শিরীন সাবিহা বলেন, “করোনা সংক্রমণ রুখতে সকলের ঘরে থাকা প্রয়োজন। সাধারণ কোনো রোগ বালাইয়ে রোগীরা যেন ঘরে বসেই আমাদের পরামর্শ পান সেজন্যই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন রোগের ব্যাপারে পরামর্শের সাথে সাথে আমরা করোনা বিষয়ক স্বাস্থ্যগত তথ্যও এই মাধ্যমে দিয়ে থাকি “।

 

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার পক্ষ থেকেও চালু রয়েছে ‘ইমার্জেন্সি মেডিকেল সাপোর্ট’ নামে টেলি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। তারা এই কার্যক্রমে চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও শুরু করেছে।

 

জরুরী মুহুর্তে নগরীর যেকোনো রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে বিনামূল্যে তারা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করছে। এই কার্যক্রমের সমন্বয়ক বাসদ নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী জানান, রোগীর প্রয়োজন অনুসারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শও দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

এছাড়া করোনাসহ যেকোনো রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ২০টি বিশেষায়িত এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনো মুহুর্তে নগরীর যেকোনো জায়গা থেকে যোগাযোগ করলে এসব পরিসেবা প্রদান করা হয়।