উজানের পানির চাপে বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর অন্তত ১৬ পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এতে নদী তীরের বাসিন্দাদের বাড়িঘর, বিদ্যালয়, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিলীনের পথে।
উপজেলার বাইশারী, সৈয়দকাঠী, ইলুহার, চাখার, সলিয়াবাকপুর ও সদর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাইশারী ইউনিয়নের শিয়লকাঠী ফেরিঘাট, বাংলাবাজার, উত্তর নাজিরপুর; ইলুহার ইউনিয়নের পূর্ব ইলুহার, মলুহার; সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের মসজিদ বাড়ি, দাসের হাট, নলশ্রী; সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের খেজুরবাড়ি, খোদাবক্স; চাখার ইউনিয়নের চাউলাকাঠী, লস্করপুর খেয়াঘাট, হক সাহেবের হাট ও সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকাঠী, কাজলাহার ও জম্বুদ্বীপে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এসব এলাকার মানুষ স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের কাছে অনুরোধসহ কয়েকটি এলাকায় নদীর তীরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
ইলুহার ইউনিয়নের বিহারী লাল একাডেমির (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান, ভাঙনে বিলীনের পথে এতিহ্যবাহী একাডেমি।
এছাড়া পার্শ্ববর্তী পূর্ব ইলুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মন্দির, বাজার, ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি।
তিনি বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা সম্প্রতি নদী তীরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এছাড়া দুইদিন আগে বরিশালে গিয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এ সময় তিনি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলার চাখার ইউনিয়নের হক সাহেবের হাট এলাকার আনোয়ার হাওলাদার (৬০) বলেন, নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে তার ভিটেমাটি।
তার মত ব্যবসায়ী শহিদুল মুন্সি, হাবিবুর রহমান কাজি, নাইম খলিফা, হারুন চাপরাশী, মজিবর কাজি, সঞ্জয় শীল, কেরামত আলী, সফিক চাপরাশি, কচি খাঁ ও সিদ্দিকুর রহমানসহ অনেকে নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন।
হক সাহেবের হাট সাধারণ সম্পাদক মিজান চাপরাশি বলেন, অবিভক্ত বাংলার নেতা আবুল কাশেম ফজলুল হক (শেরেবাংলা) প্রতিষ্ঠিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী হক সাহেবের হাট সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
এ বছর ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
চাখার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল হক টুকু বলেন, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া হক সাহেবের হাট সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবরে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়েছে।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন কুমার সাহা বলেন, হক সাহেবের হাট, পূর্ব ইলুহার, মসজিদ বাড়ি, দাসেরহাটসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙন রোধে মাঝে মধ্যে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলানো হচ্ছে। তবে এতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরিশাল কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ কারণে ভাঙন তীব্র হয়েছে। ভাঙন রোধে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।