বরিশালের স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধু

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ কিছু স্মৃতি রয়েছে বৃহত্তর বরিশালকে ঘিরে। অনেক স্মৃতির কথা আজ অনেকেই ভুলে গেছেন। আবার অনেকেরই তা জানা নেই। বরিশালের স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা অজানা তথ্য।

সূত্রমতে, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশালে এসে সদর রোডের পাশের সরু গলিতে সঙ্গীদের নিয়ে হাঁটছিলেন। গলিটির নাম অনামীলেন। জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে সোজা উল্টো দিকে তিনি হেঁটে চলেন। গন্তব্য দক্ষিণে, যেখানে প্রয়াত কাজী মোতাহার হোসেনের বাড়ি। সেই বাড়িটি ছিলো এক আইনজীবী রাজনীতিকের। বাড়িটিতে অবস্থান করছিলেন সীমান্ত গান্ধী গাফ্ফার খান। বাড়িতে প্রবেশের খানিক পূর্বে একটি বাড়ির সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধু। বাড়িটির অবয়ব এখনও কিছুটা রয়েছে। বাড়িটির সাইন বোর্ড দেখে বিস্ময়ে সঙ্গীদের দিকে তাকান বঙ্গবন্ধু। জানতে চান, হক কুটির! মানে হক সাহেবের (শেরে বাংলা) বাড়ি এটি? সঙ্গীরা না সূচক জবাব দিলে বঙ্গবন্ধু চলে যান সীমান্ত গান্ধীর উদ্দেশে।

১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার বরিশালে আসেন। বঙ্গবন্ধু তখনকার সাধারণ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে বরিশালে এসেছিলেন বলে জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বঙ্গবন্ধু সেই বছরের সফরে পাঁচদিন বরিশালে ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বকালে বঙ্গবন্ধু যতোবার বরিশালে এসেছেন, ততবারই তিনি থাকতেন নগরীর কালীবাড়ি সড়কের বোন আমেনা খাতুনের অর্থাৎ সাবেক মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে। মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ননায় জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারে এসে নদী-নালার দেশ বরিশালের গ্রামগঞ্জে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বর্তমান সেটেলমেন্ট (জোনাল) অফিসের সামনে ছিল লঞ্চ টার্মিনাল। সেখান থেকে হাইস্পীড কোম্পানির দেয়া নৌ-যান ‘পাঁচগাও’তে চেঁপে বঙ্গবন্ধু ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামগঞ্জে। শহরে তিনি ঘুরতেন ব্যবসায়ী জালাল আহম্মেদের লাল রঙের একটি কারে চড়ে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একবার বরিশালে এসেছিলেন। ওইবছরের ১ জানুয়ারি বরিশালের একটি জনসভায় তিনি ভাষণ দিয়েছেন। একইদিন তখনকার জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ স্থানীয় বেল্স পার্ককে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ হিসেবে নামকরণ করেন। সেই থেকে বেল্স পার্ক ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ হিসেবে পরিচিত। একইদিন সকালে বরিশালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভিত্তি ফলকেই প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেন শহরের বাংলাপ্রিয় মানুষ। বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন মাঠের মাঝে ছিলো সেই ভিত্তিপ্রস্তরটি।

নগরীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, ধান-নদী ও খালের অবহেলিত বরিশালের উন্নয়নকে নিয়ে সর্বদা স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধুর বোনজামাতা সাবেক মন্ত্রী ও কৃষকনেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু বরিশালবাসীর জন্য অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ পরিবারের সদস্যরা ঘাতকদের নির্মম বুলেটে শহীদ হন। এরপর দীর্ঘদিন আটকে ছিল বরিশালবাসীর ভাগ্যের চাকা। থেমে থাকে উন্নয়ন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের জেষ্ঠ পুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি থেকে চীফ হুইপ, বর্তমানে মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকায় তারই দেয়া অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো খুবই দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী। বর্তমানে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জেষ্ঠপুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পূর্ব পুরুষদের মতো বরিশাল নগরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।