বরিশালের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago
বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ

মুনুর রশীদ নোমানী : শিক্ষা প্রসারের মহতী লক্ষ্যকে সামনেরেখে ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকার বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজস্থাপন করে।

প্রতিষ্ঠানটিতে স্কুল ও কলেজ শাখারয়েছে। জাতি গঠনে এ প্রতিষ্ঠান ২০০৭থেকে  অবদান রেখে যাচ্ছে। সে কারণেএটি বরিশাল বিভাগে সাড়া জাগানোশিক্ষাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যেপ্রতিষ্ঠানটি  বরিশাল জেলার শ্রেষ্ঠপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে শুধু শ্রেণী শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেরমধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আদর্শ শিক্ষার্থী  গঠন করে জাতীয় জীবনেও অবদান রেখে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এসব কৃতিত্বের মূলে রয়েছে শিক্ষক, গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান মজুমদার। সঙ্গে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রচেষ্টা এবং  সহযোগিতা।

বর্তমানে এখানে প্রথম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত  মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৪০ জন শিক্ষক ও২২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি  কর্মরত রয়েছেন। দুহাজার পাচঁশত  শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এ প্রতিষ্ঠানে১টি অত্যাধুনিক ভবন রয়েছে।

শিক্ষার মানোন্নয়নে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ, ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব, ইন্টারনেট কানেকশন, সর্বাধুনিক বিজ্ঞানাগার ও সিসি ক্যামেরা সবই স্থাপন করা হয়েছে।

এ প্রতিষ্ঠানেরয়েছে প্রশস্ত ও মনোরম সবুজ ক্যাম্পাসে একটি  খেলার মাঠ প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটিসাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে।

বর্তমান অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান মজুমদার দায়িত্ব নেয়ার পরপ্রতিষ্ঠানটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়।  তারা সব সময় শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ গড়তেনিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বার্ষিক খেলাধুলা, বনভোজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস, বিজয়দিবস, শহীদ দিবস, জাতীয় শোক দিবস এখানে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।

প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে ১১ সদস্যবিশিষ্ট দক্ষ গভর্নিং বডি। এতে সভাপতি বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার  ও সদস্য সচিব কলেজ অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান মজুমদার । অধ্যক্ষ বলেন , সভাপতি বিভাগীয়কমিশনারের দিকনির্দেশনায় শিক্ষক, অভিভাবকদের  সহযোগিতায় এ প্রতিষ্ঠান উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথেএগিয়ে যাচ্ছে।

অধ্যক্ষের দক্ষ পরিচালনায়  প্রতিষ্ঠানটির ভৌত কাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ওফলাফলের দিক থেকেও প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান  অভিভাবক সমাজ ও সুধীজনের প্রশংসালাভ এবং সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। এ কারণে এখানে লেখাপড়ার সুষ্ঠু ও সুন্দরপরিবেশ বিদ্যমান রয়েছে।

এদিকে কলেজটিতে দুটি ক্যান্টিন আছে যেখানে সমস্ত ছাত্রদের জন্য তাজা খাদ্য সরবরাহ করা হয়।এছাড়া সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে ক্লাস টেস্ট, টিউটিরিয়াল টেস্ট এবং পর্ব সমাপ্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উন্নতি – উন্নয়ন উন্নত ও নৈতিক গুণমান অর্জনের জন্য ভাল ব্যবস্থাপনা রয়েছে। খেলাধুলা  এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অদৃশ্য প্রতিভা প্রকাশ।

দৈনিক পাঠদান বিবরনী ডায়েরী,একাডেমিক ক্যালেন্ডার সহ শিক্ষার্থীদের  পরিকল্পিত শিক্ষা দেওয়া হয়।সুরক্ষিত এবং প্রশস্ত অডিটোরিয়াম রয়েছে। একটি সুগঠিত এবং  কম্পিউটার ল্যাবরেটরি রয়েছে।ধূমপানের পাশাপাশি রাজনীতি মুক্ত এ  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।  যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি এবং রাসায়নিকসঙ্গে আধুনিক এবং সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি রয়েছে।

মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের সাহায্যে ক্লাস নেয়া হয় ১ একর ৮ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা এপ্রতিষ্ঠানটিতে একটি ৫ তলা বিশিষ্ঠ ভবন রয়েছে। রয়েছে অধ্যক্ষের বাসভবন,সাইকেল ও গাড়ি গ্যারেজ।অভিভাবকদের জন্য রয়েছে একটি সুন্দর অপেক্ষাগার। ৭৫ টি কক্ষ,৭টি ল্যাব,১টি গ্রন্থাগার ,ছেলেদেরদুটি ও মেয়েদের দুটি কমন রুম রয়েছে।শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য অভিভাবকসমাবেশ,শিক্ষায় দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষনা সহ ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার্থীদেরনেতিবাচক আচরন দুরিকরনে প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ দফা নির্দেশনাবলী দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর অধীনে ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা মহানগরী সহ দেশের ৬টি বিভাগীয়শহরে ১১টি মডেল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ঐ ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাঝেঢাকা মহানগরীতে ৫টি, বাকী ৫টি বিভাগীয় শহরে ৫টি এবং বগুড়াতে একটি বিদ্যালয় স্থাপনেরপরিকল্পনা করা হয়। ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির একসভায় প্রকল্পটি গৃহীত হয় ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।

এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরীতে৪ টি (মোহাম্মদপুরে ১টি, মিরপুরের রূপনগরে ১টি, শ্যমপুরে ১টি, লালবাগে ১টি) এবং রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনায় ১টি করে মোট ৯টি মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাকি দু’টি প্রতিষ্ঠান (ঢাকাও বগুড়ায়) বর্তমানে বিয়াম ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।

২০০৭ সালে বরিশাল শহরেররাজাবাহাদুর সড়কের পাশে   বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রফেসর নুরুল আমিন১৫ এপ্রিল ২০০৭ এ প্রতিষ্ঠানটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক ওকর্মচারীদের নিয়োগ দেয়া হয় ও ২০০৭–২০০৮ শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীদের জন্যভর্তির ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য ষষ্ঠ – দশম শ্রেনীরকার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তৃতীয় শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান চলছে।  ২০১৮ সালের

১৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের ১২টি কলেজের মধ্যেবরিশাল মডেল স্কুল এন্ডকলেজটিকেও সরকারিকরন করা হয়েছে।শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ–সচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ১২টি কলেজকেসরকারি করন করা হয়।যার মধ্যে  বরিশাল বিভাগে শুধুমাত্র বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজকে  সরকারি করন করা হয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্টদের কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানানকলেজ কর্তৃপক্ষ। এ প্রতিষ্ঠানটিতে মেজর ড.সিরাজুল ইসলাম উকিল যিনি সরকারী ও বেসরকারিথাকাকালীন অধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমুল পরিবর্তন করেছিলেন শিক্ষার মানোন্নয়নে ।

এছাড়া তিনি প্রথম সিসিটিভির আওতায় এনেছিলেন এ প্রতিষ্ঠানটি। অনিয়মিত শিক্ষকদের সরকারি করনএবং কলেজটি সরকারি করনে তার ব্যাপক অবদান ছিল। তার কারনেই বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ডকলেজ বরিশালে পরিচিতি ও সুনাম ছড়িয়েছিল। তারই ধারাবাহিককায় বর্তমান অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুররহমান মজুমদার দক্ষতা,ন্যয় ও সততার সাথে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। তিনি যোগদানের পরক্লাশ রুমের টেবিল, চেয়ার,হল রুম,ভবনসহ ব্যাপক সংস্কার ,ক্লাশকক্ষে ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরাস্থাপন,বিশুদ্ধ পানী শোধনাগারের ব্যবস্থা করেছেন। উল্লেখ্য,বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৮টি সিসিটিভিক্যামেরা রয়েছে।ল্যাবকে করেছেন সু সজ্জিত। শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদান ওঅভিভাবকদের মনিটরিংএর কারণে দিন দিন এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে।

কলেজটির শিক্ষক প্রতিনিধি এস এম মাইনুদ্দিনবলেন,প্রতিষ্ঠানটি  প্রতিষ্টার পর হতে নানা প্রতিকুলতাকে ডিঙ্গিয়ে আজ সুনামের সাথে লেখাপড়া চলছে।এটা সম্ভব হয়েছে শিক্ষক, অভিভাবক ও স্কুলের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও সমন্বয়নেরকারনে। আমরা চেষ্টা করছি উন্নত ও আধুনিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তুলতে।তিনি আরোবলেন,শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি কার্য দিবসসহ সাংস্কৃতিক আঙ্গীনায়ও পিছিয়ে নেই  ছাত্রছাত্রীরা।  লেখাপাড়ার বাহিরেও শিক্ষাসফর, মা সমাবেশ, ক্লাস পার্টি, বার্ষিক মিলাদ,  পুজা, বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্টান ও জাতীয় দিবসগুলো পালন করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে বরিশালের টিআইবির সভাপতি বিশিষ্ঠ নারীনেত্রী প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন,  ভিবিষ্যৎ জাতিগঠনের ক্ষেত্রে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ডকলেজ অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি, মেধা, সামাজিক ওসাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বাড়তি উদ্যাগ খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ আধুনিক মডেল শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে সর্বোচ্চ সুুযোগ–সুবিধা পেয়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।  তবে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত নিরাপত্তার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ও আবাসিক ছাত্রাবাস করার দাবি জনিয়েছেন।

বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র মুশফিকের পিতা আমিনুলশাহিন বলেন, শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, উক্ত প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা তাদের সাধ্যমতো খুবই যত্নসহকারে  সকল শিক্ষার্থীকে সৃনশীলতার আঙ্গীকে নিত্য নতুনভাবে শিখিয়ে যাচ্ছেন। তিনি  আরওজানান, শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার উপরও বেশ জোড় দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তিনি প্রতিষ্ঠানের সফলতাকামনা করেন।

বর্তমান অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান মজুমদার যোদানের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অবস্থারঅভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে।

একজন অধ্যক্ষের সদিচ্ছা,সততা,সক্রিয় সহকর্মী ও বিদ্যালয় পরিচালনাপরিষদের সভাপতির অকুণ্ঠ সমর্থন–সহযোগিতা,কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষণ পরিবেশের উন্নয়নঘটাতে পারে,তার আর্দশ উদাহরণ হতে পারে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।